ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের মানোন্নয়নের স্বর্ণমান ‘ট্রিপল-এ’ রেটিং বাতিল করে দেওয়ার পর সোমবার এশিয়ার শেয়ারবাজার ও ডলারের দরপতন ঘটেছে। মুডি’জ রেটিংস এ সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণ বোঝাকে দায়ী করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে।
হংকং থেকে এএফপি জানায়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস সংক্রান্ত একটি চুক্তি হওয়ায় বাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। তবে মুডি’জ-এর এই রেটিং হ্রাসের খবর বিনিয়োগকারীদের নতুন করে হতাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণার মাধ্যমে যেসব নতুন শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তা বাজারে বড় ধাক্কা দেয়। তবে এরপর থেকে হোয়াইট হাউস নমনীয়তা দেখানোয় এবং চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোয় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশাবাদী হন।
রেটিং কমিয়ে মুডি’জ জানায়, ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশে পৌঁছবে, যা ২০২৪ সালে ছিল ৬.৪ শতাংশ। এর জন্য তারা মূলত ঋণের ওপর সুদের বোঝা, বর্ধিত সামাজিক ব্যয় এবং রাজস্ব ঘাটতিকে দায়ী করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই রেটিং হ্রাস যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে উচ্চতর সুদহার দাবির ইঙ্গিত দিতে পারে, যার ফলে সরকারকে আরও বেশি সুদ দিতে হতে পারে।
তবে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এই রেটিং হ্রাসকে ‘পেছনের চিত্র’ হিসেবে অভিহিত করে দোষ চাপিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর। সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১০০ দিনে এমন পরিস্থিতি তৈরি করিনি। বাইডেন প্রশাসনের চার বছরের খরচ ও ৬.৭ শতাংশ ঘাটতি—যা যুদ্ধকালীন বা মন্দা না থাকলেও সর্বোচ্চ—আমরা তা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি।’
হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিয়াং মুডি’স অ্যানালিটিকস ও তাদের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যান্ডির সমালোচনা করে এক্স-এ লেখেন, ‘তার বিশ্লেষণ কেউই গুরুত্ব দেয় না। তিনি বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছেন।’
এই ঘোষণাটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য আরও এক ধাক্কা, কারণ কংগ্রেসে তাঁর ‘বড়, সুন্দর বিল’ পাস হয়নি। বিলটি ট্যাক্স ছাড় দীর্ঘায়িত ও কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করতে চেয়েছিল। কংগ্রেসের স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, এতে এক দশকে বাজেট ঘাটতি আরও ৪.৮ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ত।
ডাউনগ্রেডের পর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ফ্রেঞ্চ হিল বলেন, ‘এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের আর্থিক অবস্থা শৃঙ্খলাবদ্ধ নয়।’
হাউস স্পিকার মাইক জনসন জানান, সপ্তাহের শেষ নাগাদ এই বিল নিয়ে কংগ্রেসে ভোটাভুটি হতে পারে।
এদিকে হংকং ও সাংহাইয়ের বাজারে দরপতন ঘটে, কারণ প্রত্যাশার তুলনায় কম বিক্রি হয়েছে চীনের খুচরো পণ্যের। তবে দেশটির শিল্প উৎপাদন বাড়তে দেখা গেছে। টোকিও, সিডনি, সিউল, সিঙ্গাপুর, ওয়েলিংটন, তাইপে ও জাকার্তাতেও বাজার নিচে নেমেছে।
ডলারের মান অন্যান্য প্রধান মুদ্রার তুলনায় কমেছে। সোনার দাম উঠেছে আউন্সপ্রতি ৩,২২৫ ডলারে, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে এর আকর্ষণ বেড়েছে।
ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের রে অ্যাট্রিল বলেন, ‘মুডি’জ-এর এই পদক্ষেপের কারণে ট্রেজারির ওপর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমবে—এমনটা ভাবার কারণ নেই। তাতে চার-পাঁচ ধাপ রেটিং কমতে হবে।’
এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, ‘মুডি’জ হয়তো মাইক্রোফোন ফেলে দিল, কিন্তু শেয়ারবাজারের জন্য আসল পরীক্ষা হবে খুচরা বিক্রির নতুন উপাত্তে। টার্গেট, হোম ডিপো, লোউ’স, টিজেএক্স, রালফ লরেন—সবাই এবার প্রতিবেদন দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এই রেটিং হ্রাস প্রযুক্তিগতের চেয়ে মানসিক প্রভাব বেশি ফেলবে।’
মূল সূচকসমূহ (বাংলাদেশ সময় সকাল ০৮:৩০টা অনুযায়ী):
টোকিও নিক্কেই ২২৫: ০.৪ শতাংশ হ্রাস, দাঁড়িয়েছে ৩৭,৬১৭.৬৩ পয়েন্ট
হংকং হ্যাং সেং: ০.৬ শতাংশ হ্রাস, ২৩,২১১.২৯ পয়েন্ট
সাংহাই কম্পোজিট: ০.২ শতাংশ হ্রাস, ৩,৩৬১.৫৫ পয়েন্ট
ইউরো/ডলার: বেড়ে ১.১১৮০ ডলার
পাউন্ড/ডলার: বেড়ে ১.৩৩০০ ডলার
ডলার/ইয়েন: কমে ১৪৫.০৯ ইয়েন
ইউরো/পাউন্ড: বেড়ে ৮৪.০৫ পেনি
ডব্লিউটিআই তেল: ০.১ শতাংশ কমে ৬২.৪১ ডলার প্রতি ব্যারেল
ব্রেন্ট তেল: ০.২ শতাংশ কমে ৬৫.২৭ ডলার প্রতি ব্যারেল
নিউইয়র্ক ডাও জোন্স: ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি, ৪২,৬৫৪.৭৪ পয়েন্ট
লন্ডন এফটিএসই ১০০: ০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি, ৮,৬৮৪.৫৬ পয়েন্ট