ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫ (বাসস): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার কংগ্রেসে তার বহুল আলোচিত কর ও ব্যয় বিলের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
রিপাবলিকানরা এই ভোটে অল্প ব্যবধানের জয়ের উপর ভরসা রাখছেন। যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।
বলটির উপর টানা ২৭ ঘণ্টার তীব্র অভ্যন্তরীণ বিতর্কের পর রিপাবলিকান দলের সিনেটররা মঙ্গলবার মাত্র একটি টাই-ব্রেকিং (সমতা ভাঙা) ভোটে এই বিশাল বিলটি পাস করেন। বিলটির কিছু ধারার কারণে জাতীয় ঋণ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, একইসঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ইতিহাসের অন্যতম বড় আঘাত হানতে চলেছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এই বিলটি রিপাবলিকানদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি উদ্যোগ যা মঙ্গলবার সিনেটে মাত্র একটি টাই-ব্রেকিং ভোটে পাস হয়। এই ভোটের আগে টানা ২৭ ঘণ্টার বিতর্ক ও দলে দলে বিভক্ত মতবিরোধ দেখা দেয়। বিলটি যেখানে বিশাল অঙ্কের জাতীয় ঋণ বৃদ্ধির কারণ হবে, সেখানে আবার এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওপর ইতিহাসে অন্যতম বড় আঘাত হানতে চলেছে।
মূলত এই বিলটি ২০২৫ সালের মে মাসে প্রতিনিধি পরিষদে অনুমোদিত হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত ভাষার অনুমোদনের জন্য এটি পুনরায় হাউসে পাঠানো হয়েছে এবং এই অনুমোদন এখনও অনিশ্চিত।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, এই বিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এজেন্ডা এবং আমরা এটিকে আইনে রূপান্তর করছি। তিনি আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আমরা কাজ শেষ করতে প্রস্তুত।
এই প্যাকেজে ট্রাম্পের প্রচার-প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, অবৈধ অভিবাসীদের গণপ্রত্যাবাসনের জন্য তহবিল এবং তার প্রথম দফার কর রেয়াত আরও ১০ বছরের জন্য বাড়াতে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তবে এই বিলের ফলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতিতে অতিরিক্ত ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হবে এবং মেডিকেইড স্বাস্থ্য বিমা কর্মসূচিতে ১৯৬০-এর দশক থেকে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট ঘটবে।
অর্থনৈতিক রক্ষণশীলরা বলছেন, ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি পূরণে বিলটি শত শত বিলিয়ন ডলারে কম পড়েছে।
জনসনকে হাউসে বিল পাস করতে কঠিন সংখ্যাগত হিসাবের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ২০-এর বেশি রিপাবলিকান সদস্যের মধ্যে মাত্র তিনজনের ভোট হারালেই বিলটি ব্যর্থ হতে পারে।
অ্যারিজোনার রক্ষণশীল সদস্য অ্যান্ডি বিগস বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে এই বিল বর্তমান অবস্থায় পাস হবে। এর মধ্যে কিছু আশ্চর্যজনক খারাপ সিদ্ধান্ত রয়েছে।
আইনপ্রণেতারা বুধবার সকালেই ছুটির পর কংগ্রেসে ফিরে ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ট্রাম্পের স্বঘোষিত ৪ জুলাইয়ের সময়সীমার আগে দুই দিনের অতিরিক্ত সময় রয়েছে। ৮৮৭ পৃষ্ঠার বিলটি হাউস থেকে পাস হওয়া সংস্করণের চেয়েও আরও ডানপন্থী করে সিনেটে কিছু সংশোধনের মাধ্যমে পাস করানো হয়।
ঋণ বাড়ানোর কারণে বিলটি পাসের সময় একজন কনজারভেটিভ সিনেটর ভোট দেননি এবং দুইজন মধ্যপন্থী সদস্যও প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্য খাতে কাটছাঁট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভোটদানে বিরত থাকেন।
বিভিন্ন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিমা হারাতে পারেন প্রায় ১.৭ কোটি আমেরিকান এবং অসংখ্য হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, ফেডারেল খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির পরিবর্তনের ফলে কয়েক মিলিয়ন দরিদ্র আমেরিকান খাদ্য স্ট্যাম্প সুবিধা হারাতে পারেন।
জনসন আশা করছেন, বিতর্কিত হাউস ভোট পাস করাতে ট্রাম্প নিজের প্রভাব খাটিয়ে সংশয়গ্রস্ত সদস্যদের রাজি করাবেন যা তিনি অতীতেও করেছেন।
ট্রাম্প নিজেও মঙ্গলবার তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে রিপাবলিকানদের উদ্দেশে চাপ দিয়ে লিখেছেন কাজটা শেষ করো।
বিলটি কংগ্রেসে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এটি হবে ট্রাম্পের জন্য একটি বিশাল বিজয়। যিনি অনেক ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শাসন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
তিনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিজ দলের বিরূপ সদস্যদের বোঝাতে ব্যস্ত রয়েছেন। যারা ওয়েলফেয়ার প্রাপ্ত ভোটারদের ক্ষিপ্ত করতে চান না। আবার ট্রাম্পের রোষানলেও পড়তে চান না।
এদিকে, হাউস ডেমোক্র্যাটরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা এই বিলের বিরোধিতা করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউস পুনরুদ্ধারের প্রচার চালাবেন। তারা বলছেন, এই বিলের মাধ্যমে মার্কিন ইতিহাসে দরিদ্রদের থেকে ধনীদের হাতে সবচেয়ে বড় আকারে সম্পদ স্থানান্তর ঘটছে।
সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিস বলেন, সিনেটে রিপাবলিকানরা এই জঘন্য বিল পাস করে লজ্জার কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, হাউস রিপাবলিকানরাও ট্রাম্পের চরমপন্থী এজেন্ডার কাছে মাথা নত করে লজ্জা বয়ে আনছে।