ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ‘এটা কোনো জীবন নয়। আমাদের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলুন, সবকিছু শেষ হয়ে যাক, নয়তো মানুষের বিবেক জাগুক।’ কথাগুলো উচ্চারণ করেছিলেন গাজা সিটির বাসিন্দা উম্মে ইয়াসিন আবু আওদা। আজ ভোরে ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি স্কুল-আশ্রয়কেন্দ্রের হতাহতদের জন্য আল-শিফা হাসপাতালে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরইলি বাহিনীর চালানো ওই হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। হতাহতরা রাজধানী গাজা সিটির পশ্চিমাংশের রিমাল পাড়ার মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্কুলটি দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
ঘটনাস্থলে পুড়ে যাওয়া ভবনের দেয়াল থেকে ঝুলছিল ছেঁড়া কাপড়। ধ্বংসস্তূপের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল রক্তের দাগ, পুড়ে যাওয়া খাবারের টিন, লোহার চেয়ার আর একটি বৈদ্যুতিক পাখার ভগ্নাংশ। স্কুল ভবনের দেয়ালে এখনও দেখা যাচ্ছিল একটি দেয়ালচিত্র, একটি হাস্যোজ্জ্বল শিশু, পাশে এক নারী ও ফিলিস্তিনি পতাকা।
স্কুলের ভেতরে ছোট ছেলেরা ধ্বংসস্তূপে উঠে দাঁড়াচ্ছিল, উল্টে যাওয়া আসবাবের ওপর দিয়ে হাঁটছিল, কিছু কেউ কেউ খুঁজছিল তাদের ব্যবহারের সামগ্রী। স্কুলের খোলা জায়গায় কয়েকজন পুরুষ চেয়ার পেতে বসে ছিলেন।
একই সময় আল-শিফা হাসপাতালে জনতার ঢল নেমেছিল, যেখানে শোকস্তব্ধ নারী-পুরুষ নিহতদের মৃতদেহের পাশে বিলাপ করছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে তো আগেই মারা গেছে। এবার আমার ভাগনি, তার ছয়টি সন্তান আর স্বামী—সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমাদের জীবনে কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়ির বলেন, ইসরাইলি বাহিনীর ওই বিমান হামলায় বহু মানুষ আহতও হয়েছেন।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামলার বিষয়ে এএফপিকে জানিয়েছে, তারা ঘটনার তদন্ত করছে। তবে স্বাধীনভাবে হতাহতের সংখ্যা যাচাই করা যায়নি, কারণ গাজায় প্রবেশের উপর কড়া বিধিনিষেধ এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো কঠিন।
২১ মাস ধরে চলা ইসরাইল-গাজা যুদ্ধের ফলে ইতোমধ্যেই গাজার প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ অন্তত একবার করে গৃহচ্যুত হয়েছেন। বহু মানুষ স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন, তবে এগুলোও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।
হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামলায় ইসরাইলে ১,২১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। তার পাল্টা অভিযানে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭,১৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের সিংহভাগই বেসামরিক বলে জানিয়েছে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘ এসব পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।