ঢাকা, ৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে হোয়াইট হাউসে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে তার বহুল আলোচিত কর ও ব্যয় সংক্রান্ত বিল স্বাক্ষর করেছেন। এদিন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে একটি স্টেলথ বোমারু বিমানের মহড়া ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত এই আইনে সই করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার একের পর এক জয় হচ্ছে, যা আগে দেখা যায়নি’।
কংগ্রেসে বিলটি পাশ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা এ সময় তার পাশে ছিলেন।
এই বিল সমাজকল্যাণ কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক কাটছাঁট আনবে বলে ডেমোক্র্যাটরা যে সমালোচনা করেছেন, তার জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা এটি বুঝতেই পারবেন না।’
ফার্স্ট ল্যাডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের ব্যালকনি থেকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এ সময় সেখানে দুইটি বি-২ বোমারু বিমান (যেগুলো সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছিল), এফ-৩৫ ও এফ-২২ যুদ্ধবিমানের আকাশে উড়ানো হয়।
এর একদিন আগে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বিলটির পক্ষে ভোট দিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এটি ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে স্বাক্ষর করার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং তিনি সেটিই করলেন।
বিলটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের কর ছাড় অব্যাহত রাখা, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই আইন স্বাক্ষর করে ট্রাম্প গত দুই সপ্তাহে তার একের পর এক রাজনৈতিক সাফল্যকে সম্পন্ন করলেন। এই সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তিনি ‘ত্রুটিহীন’ মার্কিন হামলার ফল বলেই দাবি করেন।
ইরানে হামলা চালানো পাইলটদের তিনি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে সেনা পরিবারের জন্য ছিল পিকনিকের আয়োজন।
ট্রাম্প বলেন, গত দুই সপ্তাহে যা ঘটেছে, জয়ের চেয়ে কম কিছু নয়।
বিলটি পাস করাতে ট্রাম্পকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অনেক রিপাবলিকান আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বাড়াবে। কারণ বিলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো, অভিবাসনবিরোধী অভিযান চালানো এবং করছাড় সম্প্রসারণে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আগামী এক দশকে ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি বাড়বে এবং গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু থাকা মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হবে।
হাউজে বিলটি মাত্র ৪ ভোটের ব্যবধানে (২১৮-২১৪) পাস হয়। স্পিকার মাইক জনসন রাতে জেগে থেকে বিদ্রোহী সদস্যদের রাজি করাতে কাজ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প জনসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অসাধারণ কাজ করেছেন।
বিলিয়নিয়ার ও ট্রাম্পের সাবেক মিত্র ইলন মাস্ক এই বিলের অন্যতম কড়া সমালোচক। তিনি এই বিলকে সমর্থনকারী রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাট ও অনেক ভোটার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এই বিল কম আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও কল্যাণ সহায়তা কার্যক্রম ধ্বংস করে দেবে। এই বিলের ফলে ১৯৬০-এর দশকে চালু হওয়া মেডিকেইড কর্মসূচিতে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট আসবে এবং ফেডারেল খাদ্য সহায়তাও কমবে।
অনুমাণ করা হচ্ছে, এ বিলের কারণে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যবীমা হারাতে পারে এবং অনেক গ্রামীণ হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে ট্রাম্প এসব উদ্বেগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ওরা একটি নির্দিষ্ট বাক্য রপ্ত করেছে — ‘ওহ, এটা বিপজ্জনক, সবাই মারা যাবে।’ আসলে ঠিক তার উল্টো।
ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, জনরোষ আগামী ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউজ দখলে তাদের সহায়তা করবে। তারা বলছেন, এই আইন কার্যত গরিবদের কাছ থেকে সম্পদ নিয়ে ধনীদের দিয়ে দেওয়া।