
ঢাকা, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দারফুরের পূর্বাঞ্চলীয় করদোফান অঞ্চলের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে ৩৬ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যেই আধাসামরিক বাহিনী সতর্ক করেছে যে তাদের সেনারা নতুন এক সম্মুখসারিতে জড়ো হচ্ছে। পোর্ট সুদান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
গত কয়েক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় করদোফান অঞ্চলটি সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে চলমান দুই বছরের যুদ্ধে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় করদোফান অঞ্চল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সুদানের দারফুর প্রদেশগুলোর সঙ্গে রাজধানী খার্তুমের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
আরএসএফ গত সপ্তাহে দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি এল-ফাশের দখল নেওয়ার পর যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হয়েছে।
বাহিনীটি সেখানে একটি বিকল্প প্রশাসন গঠন করেছে, যা লোহিত সাগর উপকূলীয় শহর পোর্ট সুদানভিত্তিক সেনাপন্থী সরকারের বিরোধিতা করছে।
রোববার রাতে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানায়, ২৬ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে উত্তর করদোফানের পাঁচটি এলাকা থেকে আনুমানিক ৩৬ হাজার ৮২৫ জন মানুষ পালিয়ে গেছে।
সোমবার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উত্তর করদোফানের শহর ও গ্রামজুড়ে আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উত্তর করদোফানের রাজধানী ও কৌশলগত কেন্দ্র আল-ওবাইদ দখলের জন্য লড়ছে। শহরটি দারফুর ও খার্তুমকে সংযুক্ত করে এবং সেখানে একটি বিমানবন্দরও রয়েছে।
আরএসএফ গত সপ্তাহে আল-ওবাইদের উত্তরের শহর বারা দখল করেছে বলে দাবি করেছে।
রবিবার রাতে আরএসএফের সরকারি টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘আজ আমাদের সব বাহিনী বারা ফ্রন্টে একত্রিত হয়েছে। বেসামরিক লোকদের সামরিক স্থাপনা থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করছি।’
আল-ওবাইদের পশ্চিমের উম সেমেইমার বাসিন্দা সুলেমান বাবিকের এএফপিকে বলেন, ‘আরএসএফ আল-ফাশের দখল নেওয়ার পর তাদের গাড়ির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। আমরা সংঘর্ষের ভয় পেয়ে আর খেতে যাই না।”
আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে আল-ওবাইদের পশ্চিম ও দক্ষিণে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও অস্ত্র ব্যাপকভাবে বেড়েছে।’
অওয়াদ আলি নামের এক ব্যক্তি জানান, পশ্চিম ও উত্তর করদোফান সংযোগকারী সড়কসংলগ্ন আল-হামাদি এলাকায় তিনি ‘অক্টোবরের শুরু থেকে প্রতিদিন পশ্চিম করদোফান দিক থেকে আল-ওবাইদের দিকে আরএসএফের গাড়ি যেতে দেখছেন।’
করদোফান একটি সম্পদসমৃদ্ধ অঞ্চল, যা প্রশাসনিকভাবে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম করদোফানে বিভক্ত।
আফ্রিকাবিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মার্থা পবি গত সপ্তাহে সতর্ক করে বলেন, ‘এই অঞ্চলটি সম্ভবত যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোর পরবর্তী কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, আরএসএফের বিরুদ্ধে ‘বৃহৎ পরিসরের নৃশংসতা’র অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে তথাকথিত ‘সহযোগীদের’ বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত, যা প্রায়ই জাতিগতভাবে প্রণোদিত।
তিনি আরও সতর্ক করেন যে, দারফুরে যেমন ঘটনা ঘটেছে— যেখানে আল-ফাশের পতনের পর অ-আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরএসএফের সদস্যদের গণহত্যা, যৌন সহিংসতা ও অপহরণের অভিযোগ উঠেছে- করদোফানেও তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতিক সহিংসতায় উত্তর করদোফানে অন্তত ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকও রয়েছেন।
দুই পক্ষ— সেনাবাহিনী ও আরএসএফ— উভয়েই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘোষণা করে যে, ‘আরএসএফ ও তাদের সহযোগী মিলিশিয়াদের সদস্যরা সুদানে গণহত্যা চালিয়েছে।’
তবু সুদানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ এখনো নিস্পৃহ রয়ে গেছে এবং শান্তি প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।
এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিকারী যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।