মাগুরায় উদ্যোক্তা মহাইমিনের মাশরুম চাষে মাসে দুই লাখ টাকা আয়

বাসস
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৪ আপডেট: : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:০৩
মাগুরায় মাশরুম চাষে লাভের মুখ দেখেছেন উদ্যোক্তা মহাইমিন। ছবি: বাসস

আব্দুল আজিজ

মাগুরা, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলার বড়খড়ি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মহাইমিন আলম (২১) মাশরুম চাষে এক অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার বাবা কৃষক। তাদের পরিবার সবসময় আর্থিক কষ্টে থাকত। পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে ২০১৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি এই উদ্যোগ শুরু করেন।

ছোট থেকে বড় যাত্রা
মহাইমিন মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তার যাত্রা শুরু করেন। টাকাগুলো তিনি বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ ও একটি ছাগল বিক্রি করে জমান। পরিবারের সহযোগিতায় ২০১৭ সালের শেষের দিকে ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেন। তখন তিনি এসএসসি পরীক্ষাও শেষ করেননি। প্রথম বছরেই তিনি ১ লাখ টাকা লাভ করেন।

বর্তমান সফলতা
এখন মহাইমিন প্রতি মাসে ১ থেকে ২লাখ টাকা আয় করছেন। তার এই সাফল্যে পরিবারে আর্থিক স্থিতি ফিরে এসেছে এবং তিনি স্থানীয় ১৫ জন নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও, পার্ট-টাইম শ্রমিকরা ঘণ্টায় ১৫০-২০০ টাকা আয় করছেন।

আধুনিক ল্যাব ও উৎপাদন 
মহাইমিন এখন একটি আধুনিক মাশরুম ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছেন, যেখানে প্রতি মাসে ১০০০-১৫০০ মাদার কালচার বীজ উৎপাদিত হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা। সকল খরচ বাদ দিয়ে তার মাসিক সঞ্চয় ১.৫ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে থাকে।

এলাকার উপর প্রভাব
মহাইমিনের সাফল্য দেখে তার গ্রামে অনেকেই মাশরুম চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এলাকার তন্ময় দাস, তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মাসে ৮হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা আয় করছেন। স্বপ্না রানী মহাইমিনের দিকনির্দেশনায় মাশরুম চাষ শুরু করে লাভবান হচ্ছেন।

মাশরুমের বাজার ও সম্প্রসারণ
মাহাইমিন এখন প্রতিদিন ৪০০-৫০০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করছেন, যা স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনার মতো বড় শহরে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ৬ মাসের ব্যবধানে তিনি ২৫ শতক জমি, ২১ লাখ টাকার ৬টি গরু এবং ৫ লাখ টাকায় মাশরুম চাষের ঘর নির্মাণ করেছেন।

পরিবারের সমর্থন
প্রথমে মহাইমিনের বাবা দিদারুল ইসলাম মাশরুম চাষে আগ্রহী ছিলেন না। তবে পরে এর লাভজনক দেখে তিনি ছেলের পাশে দাঁড়ান। এখন বাবা-ছেলে একসঙ্গে কাজ করছেন এবং সংসার স্বচ্ছলতার সঙ্গে চলছে।

প্রশংসা ও সরকারি সহায়তা
জেলার সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হুমাউন কবীর বলেছেন, মহাইমিনের সাফল্য আমাদের কৃষি খাতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত। তার উদ্যোগ শুধু আর্থিক সাফল্যই নয়, বরং স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। 

সবার প্রতি আহ্বান
মহাইমিন সবাইকে মাশরুম চাষে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সঠিক পরিকল্পনা আর পরিশ্রম করলে যে কেউ মাশরুম চাষ থেকে ভালো আয় করতে পারবেন।

এক নতুন সম্ভাবনা
মহাইমিনের উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতিকে একটি নতুন দিগন্ত দেখিয়েছে। তার গ্রাম বড়খড়ি এখন মাশরুম চাষের জন্য পরিচিত। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন মাশরুম চাষ হয়।

মহাইমিনের এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প প্রমাণ করে যে পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারা দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে পারে এবং অর্থনৈতিক সফলতা আনতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট ছাপাতে ৯১৪ মেট্রিক টন রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে কেপিএম
খুলনায় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা একীভূতকরণে গোলটেবিল আলোচনা সভা
ব্রোঞ্জ হারানোর হতাশা বাংলাদেশের, প্রথম পদক উজবেকিস্তানের
রাঙ্গামাটিতে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে অজগর অবমুক্ত
বরিশালের লেগ স্পিনার রাবেয়ার স্বপ্ন দেশকে ভাল কিছু উপহার দেয়া
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী হাকিম হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৬, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার
নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে কাজ করছেন চট্টগ্রাম আদালত
মাছ-মুরগির খামার করে ভাগ্য বদল পটুয়াখালীর রাজিব কর্মকারের 
ঢাকায় ককটেল হামলা: আন্তঃধর্মীয় ঐক্য রক্ষায় সরকারের কঠোর বার্তা
১০ উইকেট প্রয়োজন তাইজুলের
১০