শিরোনাম
লালমনিরহাট, ২১জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় আমন মৌসুমে ভালো উৎপাদন এবং ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ধান চাষের জন্য জমি সমান করে সার ছিটানো,আগাছা পরিস্কার, চারা রোপণসহ নানান কাজ করছেন। দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পাশাপাশি পুরোনো পদ্ধতিতে গরু দিয়ে জমিতে মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন বাসস'কে জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যেই বীজতলার কাজ শেষ করে ধানের চারা রোপণ করা শুরু করেছেন। গত মৌসুমে বাজারে আমন ধানের দাম ভালো পাওয়ায় বোরো চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক উপজেলার অনেক স্থানে আংশিকভাবে ধান-রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তবে আগামী ৩০ জানুয়ারির পর পুরোদমে ধান রোপণ কার্যক্রম শুরু হবে। কৃষকদের সহায়তায় বীজতলা ও জমি তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ কার্যক্রমের তদারকি করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
জেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , আগাম চারা রোপণ করায় ক্ষেতে ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। আর সারি সারি করে ধানের চারা রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্তি মেলে। এছাড়া ক্ষেতে রোগ-বালাই কম হওয়ায় অন্যান্য সময়ের ফসল থেকে শতকরা প্রায় ২০ভাগ উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারনে শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। পাশাপাশি কীটনাশক, বীজ, সার ও ডিজেলের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘাপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।
এবার আবাদকৃত উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের জাত গুলো হলো ইস্পাহানি সেভেন, এসিআই কোম্পানির বন্ধু , পারটেক্সসের বালিয়া টু, সিনজেন্টাল কোম্পানির হীরা ১২, ব্রাকসিডের সাথী, আফতাব ১০৬, সুপ্রিম সীড কোম্পানির হীরা সিক্স। দেশি জাতের ধানের মধ্যে ব্রি ধান ৭৪,ব্রি ধান ১০০ সহ উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত রোপণ করেছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো চারা রোপণের জন্য মাঠ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। কেউ পানির সেচ দিচ্ছেন, কেউ আবার গরুর হাল দিয়ে মই দিচ্ছেন,কেউবা বীজতলা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেসব জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে ,তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছেন। যেসব কৃষক আমন ধান কাটার পর আলু বা সরিষা চাষ করেননি, তারা আগাম সে সব জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। ইরি বোরো ধানের মধ্যে কৃষি বিভাগের নতুন উদ্ভাবন করা ভ্যারাইটি হাইব্রিড ও উপশী জাতের ধান এবার বেশী করে রোপণ করছেন কৃষকেরা।
লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের
কৃষক আমজাদ আলী (৫২) বাসস'কে জানায়, তিনি এবার ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। ইতিমধ্যে সবার আগেই জমিতে পানি নিষ্কাসনের সাথে সাথে তিনি ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করতে শুরু করেছেন। তিনি আমন ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন তাই এবার বোরো চাষের জন্য একটু আগে থেকেই জমির পরিচর্যা ও
বোরো ধান রোপণ করছেন। তবে তিনি বলেন, এবার প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়ায় কৃষি শ্রমিকরা তাদের মজুরি কিছুটা বেশি নিচ্ছেন।
লালমনিরহাট সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বাসস'কে জানায়, ১১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে সদর উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৯হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, সেচ সুবিধা থাকায় ও ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা বোরো ধান চাষে অধিক মনোযোগী হয়েছে পড়েছে।