বাসস
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২৩

শেখ হাসিনাকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে: তারেক রহমান

বুধবার সন্ধ্যায় ফেনীর সোনাগাজীতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণহত্যার দায়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র ২৪’র জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেই দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। আহত হয়েছেন হাজারও ছাত্র-জনতা। এছাড়াও বিগত ১৬ বছরে বিএনপির লাখ-লাখ নেতাকর্মী দলটির নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এজন্য গণঅভ্যূত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনভাবে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’

তারেক রহমান আজ বুধবার সন্ধ্যায় ফেনীর সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চূয়াল প্ল্যাটফর্মে  বক্তব্যকালে এসব কথা বলেন। 

২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত  মাহাম্মদ   মাসুদের   পরিবারকে   ঘর   এবং   ফেনী,   নোয়াখালী   ও   লক্ষ্মীপুরে  চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহিদ হওয়া ৪৫ জনের পরিবারের মাঝে  আর্থিক অনুদান দিতে এ আয়োজন করা হয়।

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে  কিছু মানুষ সংস্কার-সংস্কার করছে ুউল্লেখ  করে তারেক রহমান বলেন, অথচ যখন স্বৈরাচারী সরকার গুলির জোরে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল, তখন একমাত্র বিএনপিই সংস্কার চেয়েছিল। তাই, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সংস্কারের কথা বলে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে সমস্যা আরও বাড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছেন।   কলকারখানা   স্থাপন   করে   মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশকে  এগিয়ে   নিতে প্রাণপন চেষ্ঠা করেছেন। 
 
তিনি বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় যায় তখনই দেশ এগিয়ে যায়। সেই ধারাবাহিকতায় দেশকে নতুন করে এগিয়ে নিতে আমরা আড়াই বছর আগে রাষ্ট্র  কাঠামো মেরামতের ৩১  দফা  ঘোষণা  করছিলাম। আগামীতে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার হলে; ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে আত্মত্যাগকারী  শহিদদের   মর্যাদা   প্রতিষ্ঠা ও জনগণের   প্রত্যাশা   পূরণ   করা   হবে। 

বিএনপিতে অনুচরদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে তারেক রহমান  বলেন, ‘কিছু সুবিধাবাদী মানুষ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাদের কোনমতেই সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
বিএনপির   ভারপ্রাপ্ত   চেয়ারম্যান বলেন, দেশে গণমানুষের  সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম বন্ধ হবে না। যত দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে দেশ তত দ্রুত সমৃদ্ধির পথে নিয়ে  যেতে পারবে। 
এ সময় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্রকামী প্রতিটি দল ও  মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তারেক রহমান।

সমাবেশের আগে তারেক রহমান সোনাগাজীতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার  উপজেলা   যুবদলের   সাবেক   যুগ্ম-আহবায়ক   মাসুদের   পরিবারের   জন্য  নির্মিত ঘর উদ্বোধন করেন।

উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মাসুদের পরিবারের হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন। এসময় মাসুদের মেয়ে মুনতাহা তার অনূভুতি জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মাসুদ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে চরচান্দিয়া ইউপির তৎকালীন  চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিলনের ফাঁসির দাবী জানান মুনতাহা।

জনসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ভিপি, জয়নাল আবেদিন ফারুক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম।

এ সময় বক্তারা বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীসহ সব হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হলো স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। এমনকি ১/১১-এর খলনায়ক মাসুদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এখনও গ্রেফতার হননি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ ফেনীর পতিত গডফাদার নিজাম উদ্দিন হাজারী ও আলাউদ্দিন নাসিমসহ দেশব্যাপী ২৪'র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্ব সমাবেশে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।