রাজশাহী, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর মাঠে মাঠে উঁকি দিচ্ছে সোনালী ধানের বীজ। যতদূর চোখ যায় শুধু পাকা-আধা পাকা সোনালী ধানের শীষের দোল। ধান নয়, এ যেন কৃষকের ভাগ্য দোল খাচ্ছে।
রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় এবার গত বছরের তুলনায় কম জমিতে বোরো ধান চাষ হলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদনে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সঠিক সময়ে সার ও বিষ দিয়ে কৃষকরা ধানের পরিচর্যা করায় ধানও ভালো হয়েছে। একই সময় ধানের পাশাপাশি গম, ভুট্টা, আলু, ছোলা ও মটর চাষ হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীর ৯টি উপজেলা এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় দুটি থানায় মোট ৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ হয়েছে। বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর কম জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।
এরমধ্যে পবা উপজেলায় ৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর, তানোর উপজেলায় ১৪ হাজার ১৩০ হেক্টর, মোহনপুর উপজেলায় ৭ হাজার ১০৪ হেক্টর, বাগমারা উপজেলায় ১৭ হাজার ৯৮০ হেক্টর, দুর্গাপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর, চারঘাট উপজেলায় ৬৩০ হেক্টর, বাঘা উপজেলায় ১০১৫ হেক্টর ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার বোয়ালিয়া থানায় ১২ হেক্টর এবং মতিহার থানায় ২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।
এখান থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন ধান। গত বছর ৭০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৫ হাজার ১৩৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। গত বছরের তুলনায় ধান উৎপাদন কম হবে।
এ বছর বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ও উফশী এবং স্থানীয় কালচিনি মিলে ৪৬ জাতের ধান চাষ হয়েছে। ১৭ জাতের হাইব্রিড মোট ৩৪৮৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হিরা-২, ২০৫ হেক্টর, টিয়া ৪৪৪ হেক্টর, এসএল-৮ এইচ ৮০২ হেক্টর, তেজ ৩০ হেক্টর, এসিআই-১ ৫৫ হেক্টর, তেজ গোল্ড ৩২০ হেক্টর, ধানী গোল্ড ৮২ হেক্টর, ব্রিহাইব্রী-৮ ২ হেক্টর, এ্যারাইজ ৭০০৬. ১৫ হেক্টর, এস১২০৩, ৮২৫ হেক্টর, এস-১২০৪, ৫ হেক্টর, এস-১২০৮ ৪৫ হেক্টর, ছক্কা ২৬২ হেক্টর, শংকর ৩৯১ হেক্টর।
২৮ টি জাতের উফশী মোট ৬৪,৭৮৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ব্রিধান-২৮, ৮৯০৬ হেক্টর, ব্রিধান-২৯, ৭৭৬ হেক্টর, ব্রিধান-৫০, ৫৫ হেক্টর, ব্রিধান-৫৮, ২১৭৮ হেক্টর, ব্রিধান-৬৩, ১৫৭২ হেক্টর, ব্রিধান-৭৪, ৩৭৮ হেক্টর, ব্রিধান-৭৫, ১১২৪১ হেক্টর, ব্রিধান-৭৬, ২৪৫ হেক্টর, ব্রিধান-৮১. ৫৩০ হেক্টর, ব্রিধান-৮৬, ৮৬ হেক্টর, ব্রিধান-৮৮, ৬৩১৯ হেক্টর, ব্রিধান-৮৯, ২৬৭৭ হেক্টর, ব্রিধান-৯৭, ৫০২ হেক্টর, ব্রিধান-১০০, ১৮৬ হেক্টর, ব্রিধান-১০১, ২ হেক্টর, ব্রিধান-১০২, ৩১২ হেক্টর, ব্রিধান-১০৪, ১৪৩ হেক্টর, ব্রিধান-১০৫, ১১০ হেক্টর, জিরা ২৩ হাজার ২১০ হেক্টর, খাটো-১০, ১৩৬২ হেক্টর, বিনা ধান-১৪, ১১৫০ হেক্টর, বিনা ধান-১৭, ৫৭ হেক্টর, বিনা ধান-২৫, ৩০৪ হেক্টর, ব্রাক-৫৭৬, ১৪২০ হেক্টর, রড ১২৭ হেক্টর ও টোপ বোরো ১৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়াও, কালচিনা (স্থানীয়) ২৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে ধান ছাড়াও ৮ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, এবছর বিঘা প্রতি ২৪ মন ধরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। তাতে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২৩ থেকে সাড়ে ২৩ মন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলন হয়নি। তবে পুরোপুরি কাটা শুরু হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি এপ্রিল মাস থেকে মে মাসের পুরো সময় বোরো ধান কাটতে সময় লাগবে।
সরজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার তুলনামূলকভাবে ধানের রোগ বালাই কম ছিল। কৃষি কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কিছু কিছু এলাকায় কৃষকরা কৃষি অফিসারদের পরামর্শ সঠিক সময়ে পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভালো ফলনেরও আশা করছেন কৃষকরা। তানোর উপজেলার আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, আশা করছি ধানের ভালো ফলন হবে। তবে ঝড় বৃষ্টি হলে ফলন ব্যাহত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কে বলেন, গত বছরের থেকে এ বছর ২ হাজার হেক্টর জমিতে কম ধান চাষ হওয়ার কারণ হলো বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। জমিগুলোতে লাগাতার পানি দেওয়া সম্ভব ছিল না বলে কৃষকরা অন্য ফসল চাষ করেছে। জমি খালি পড়ে ছিল না। তবে ধান উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাতে ধান কাটা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।