ঢাকা, ২৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) আজ অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ডট্রেড (ডিএফএটি) এর সহযোগিতায় ‘মান্থলি ম্যাক্রো ইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)’ আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক এবং বেসরকারি পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘রাজস্ব আদায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আলাদা করার মতো সংস্কারগুলো এখনও চলমান রয়েছে।’
পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, তথ্য ও সম্প্রচার, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ড. মইন খান।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কার্যকর শুল্ক নীতি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনুকূল বাণিজ্য চুক্তিতে পিছিয়ে আছি।’
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করা জরুরি।
পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং সংগঠনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মূল উপস্থাপনা প্রদান করেন।
মূল উপস্থাপনায় ড. জাইদী সাত্তার বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো মূলত বিনিয়োগ নির্ভর, ভোগ নির্ভর নয়। বেসরকারি ঋণ প্রবাহের ধীরগতি, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির হ্রাস এবং বিনিয়োগের পরিমাণ কমে জিডিপির প্রায় ২৯ শতাংশে নেমে আসায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। যদিও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম নির্ভর খাত যেমন তৈরি পোশাক ও ফুটওয়্যারের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার উপর নির্ভর করে রপ্তানি করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান বাজার হওয়ায়, আমাদের একটি অনুকূল বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজন। কেবল শ্রমনির্ভর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার উপর নির্ভর করলেই চলবে না। আমাদের এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তি দরকার, কারণ যদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো আরও ভালো শর্তে চুক্তি করে, তাহলে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হ্রাস পাবে। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন এবং জরুরি চ্যালেঞ্জ।’
ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে গৃহীত নীতি ও পদক্ষেপগুলো আগামী ১ থেকে ৩ বছর ধরে অব্যাহত রাখতে হবে। তাই নির্বাচিত নতুন সরকারকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার এই বৃহত্তর লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হাই কমিশনার ক্লিনটন পোবকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘এমএমআই ইভেন্টটি জটিল অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো বোঝার এবং সেগুলোর সাথে কার্যকরভাবে জড়িত হওয়ার একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।’
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব জায়গা সীমিত। করনীতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জিডিপি হিসাব প্রদানের ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি, যদিও তা কষ্টদায়ক হতে পারে। এনবিআরের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্পষ্ট পৃথকীকরণ না থাকলে অর্থবহ অগ্রগতি অসম্ভব।’
প্যানেল আলোচনার পর মুদ্রানীতি, মুল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে দর্শকদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনা হয়।