মোহা. শরিফুল ইসলাম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২১ মে ২০২৫ (বাসস) : আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই বাজারে আসবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। আমের রাজধানী খ্যাত এই জেলার আম সবার কাছে সমাদৃত। এ বছর আমের মৌসুমে আম বিক্রি করে ভালো লাভ হবে বলে আশা করছেন বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ এ বছর জেলায় আম বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ হাজার কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আম বাগানের গাছে গাছে বিভিন্ন জাতের আম এখন পরিপক্ব হয়েছে। শেষ মুহূর্তে বাগানগুলোতে চলছে ব্যাপক পরিচর্যা। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন আম পাড়ার ও বেচাকেনার প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে দুই এক ধরনের গুটি জাতের আম বাজারেও আসতে শুরু করেছে।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাজারে আসবে পাকা আম। এবারও আম ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করেনি প্রশাসন। তবে অপরিপক্ব আম বাজারজাত করলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে প্রশাসন।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চককির্তি ইউনিয়নের আম চাষি রিপন আহম্মেদ এর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বেশ কয়েকজন শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে বাগানে আমের পরিচর্যায় ব্যস্ত। রিপন আহম্মেদ বলেন, আর এক সপ্তাহ পর থেকে আম পাকতে শুরু করবে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে গোপালভোগসহ কয়েকটি জাতের আম পাকবে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও কিছু জাতের আম বাজারে আসবে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবং দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে কিছুটা লাভবান হবো।
নাচোল উপজেলার আম চাষি কামাল বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচ খরচ বেশি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বালাইনাশক প্রয়োগও করতে হয়েছে বেশি। তাই এবার আমের দাম কমে গেলে বা প্রতিকূল আবহাওয়া হলে অনেক লোকসান হবে।
এদিকে আমের মৌসুম ঘিরে জেলায় চলছে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গাছ থেকে আম তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাগানিরা। বাজার কর্তৃপক্ষও সেরে নিচ্ছে তাদের আগাম প্রস্তুতি। দেশের সবচেয়ে বড় আম বাজার কানসাটকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আড়ৎদারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০০ হেক্টর কম জমিতে আম চাষ হয়েছে। এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে শিবগঞ্জে। এখানে ২০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। চলতি বছর প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩ মেট্রিক টন হিসেব করে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, চলতি আমের মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এসব আম গড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এমন হিসেব করে এ বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে।