কুড়িগ্রামে ৩৩ পয়েন্টে নদী ভাঙন, বিলীন শতাধিক ঘর

বাসস
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৬
তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার নদের ৩৩ পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। ছবি: বাসস

।। শফিকুল ইসলাম বেবু ।।

কুড়িগ্রাম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কুড়িগ্রামের ১৬টির মধ্যে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার নদের ৩৩ পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই মাসে কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বর, রৌমারী, উলিপুর, রাজারহাটের শতাধিক ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমি, বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছেন মানুষজন। তবে ভাঙন ঠেকাতে জরুরী ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় ৩৩ টি পয়েন্টে প্রায় ৪ হাজার ৩১৫ কিলোমিটার জুড়ে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলমান ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে পাউবো। 

ভাঙন কবলিত স্থানগুলো হলো, রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের হবিগঞ্জ বাজারে ৩৬৫ মিটার, সোনাপুরে ৩৭০ মিটার, ঘুঘু মারিতে ৭০ মিটার, সুখেরবাতিতে ১০০ মিটার, ফুলুয়ারচরে ৭০ মিটার, দক্ষিণ নামাজের চরে ১৪০ মিটার, উত্তর নামাজের চরে ১৭৫ মিটার, গেন্দার আলগায় ১৪০ মিটার।

রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে চর নেওয়াজীতে ৩৫ মিটার, কোদালকাটিতে ২৮০ মিটার, জিঞ্জিরামে ১০০ মিটার, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর ইয়ুথনেটে ১৪২ মিটার, উলিপুর উপজেলার নুরুন্নাহার স্কুল সংলগ্ন ১০৫ মিটার, রসুলপুরে ১৪০ মিটার, মোল্লারহাটে ১০০ মিটার, কিসমত ফুলবাড়িতে ১২০ মিটার, দাড়িয়ারপাড়ে ২২০ মিটার। 

এছাড়া রাজারহাট উপজেলার রামহরিতে ৭৫ মিটার, নাগেশ্বরী উপজেলার মাদারগঞ্জে ১১১ মিটার, কালিগঞ্জে ৩৪০ মিটার, দই খাওয়ার চরে ১৭৫ মিটার, সারডোব ধরলার নদী ১৫০ মিটার, ফুলবাড়ি চরগোরকমন্ডপে ১৫০ মিটার, দাড়ি কিশোরপুরে ৫০ মিটার, দামাল গ্রামে ৫০ মিটার, অজিতপুরে ৮২ মিটার, চর পশ্চিম ধনিরামপুরে ৭৫ মিটার, বাঙটুর ঘাটে ৯০ মিটার, খাড়ুয়ার পাড়ে ৩৫ মিটার, চর যাত্রাপুর বানিয়াপাড়া ধরলা নদীতে ৭০ মিটার, নাগেশ্বরী দুধ কুমার নদে চর লুচনির ৭৫ মিটার, চর বলরামপুরে ৭৫ মিটার ও ভুরুঙ্গামারী ধাউড়িয়ার কুটি এলাকায় ৪০ মিটার। এসব এলাকাজুড়ে আপদকালীন সময়ে জরুরী কাজ করছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমণ্ডপ এলাকার ধরলা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব নুরনবী বলেন, গত একমাসে এ গ্রামে প্রায় ১৫টি ঘরবাড়ি ও অনেক আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত। কোথায় যাব, কি করব জানি না।

একই এলাকার সালেকা বেগম (৫৫) জানান, চোখের সামনে বাবা মায়ের কবর ধরলা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না। যে হারে নদী ভাঙতেছে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ গ্রাম আর থাকবে না। আমরা কোথায় যাবো।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বানিয়াপাড়া, সবুজপাড়ার প্রায় শতাধিক ভিটেমাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিদিন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ আশ্রয়ের আশায় আমার বাড়িতে ভিড় করছেন। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, দাড়িয়ারপার গ্রামে তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ কয়েকবার ঠিকানা বদল করেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ভারতের উজান থেকে পলি ও বালু এসে নদীতে ডুবোচরের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে উজান থেকে পানি এসে ডুবোচরে আঘাত করে গতি পরিবর্তন করায় নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ডুবোচরগুলো অপসরণ করা না হলে ভাঙন অব্যাহত থাকবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, জরুরীভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ২৫০ কেজি ওজনের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙন কবলিত স্থানগুলোতে ফেলানো হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিমানবন্দরে ‘হয়রানির’ অভিযোগ চীনের
ঢাকায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রযুক্তি প্রদর্শনী শুরু কাল
ইয়েমেনের মানবিক সমন্বয়কারীকে এডেনে সরিয়ে নিল জাতিসংঘ
কচুয়ায় পরিবেশবান্ধব গ্রাম ও সবুজ বিদ্যালয় ঘোষণা
চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমার সময় বাড়ল
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় তরুণ নিহত
কুড়িগ্রামে নদীতে পানি বাড়ছে 
মোদিকে জন্মদিনের অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্প
সাতক্ষীরায় বিশ্বকর্মা ও মনসা পূজা অনুষ্ঠিত 
দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে পুলিশের মতবিনিময়
১০