নওগাঁ, ১০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ পনেরো বছর পর আগামীকাল সোমবার নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
এবারের নির্বাচন শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক এই তিনটি পদে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে ১১টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভা কমিটির ১৪১৪ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে ওই এলাকা।
এছাড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছে। ভোট শেষে কার গলায় উঠবে বিজয়ের মালা তা এখন দেখার অপেক্ষা। তবে দলের কার্যক্রমে প্রাণ ফেরাতে এবং দলকে সুসংগঠিত করতে নতুন নেতৃত্ব আসবে এমন দাবি সকলের।
জেলা কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতারা ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন এবং বিভিন্ন আশ্বাসের বাণীও শোনানো হচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত ও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। মনে হচ্ছে এ যেন এক নতুন শহর।
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, সর্বশেষ ২০১০ সালে নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও নওগাঁ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে।
সেখানে আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য অনুমোদিত হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এই সম্মেলন হওয়ায় সকল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এ সম্মেলনে সভাপতি পদে ৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য ৮ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। মোট ভোটার ১৪১৪ জন। জেলার ১১টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা মিলে মোট ১৪ টি বুথের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সম্মেলন সফল করার জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রেজাউল করিম বাদশা আরো বলেন, নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিবেন। সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও বলেন, নওগাঁ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক এসএম রেজাউল ইসলাম রেজুর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত থাকবেন, রাজশাহী বিভাগ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ.এইচ.এম ওবায়দুর রহমান চন্দনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
নওগাঁ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও সম্মেলন পরিচালনা কমিটির সদস্য এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু বলেন, সভাপতি পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, নওগাঁ পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, আর সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম টুকু ও আমিনুল ইসলাম বেলাল।
এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শফিউল আজম রানা, নূর-ই আলম মিঠু, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী কলি, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এই নির্বাচনই তার প্রমান। নেতা-কর্মীরা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা চান নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক।