পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করুন

বাসস
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৯
প্রতীকী ছবি

ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় চড়আঙ্গারু গ্রামে বসবাস করেন আলেয়া খাতুন। স্বামী কৃষি কাজ করেন। স্বামীর কাজে সহযোগিতা করেন আলেয়া। আলেয়ার দুই ছেলে তিন মেয়ে। ছোট মেয়ে আম্বিয়া। বয়স ৯ বছর। আম্বিয়া সকাল হতে না হতেই ঘুম থেকে উঠে চলে যায় বাড়ির বাইরে। সারাদিন ব্যস্ত থাকে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা নিয়ে। বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ফুলছড়ি নদী। আষাঢ় মাস। নদীতে পানি থৈ থৈ করছে। নদীতে শ্রোত আছে। বাড়ীর ঘাটে নৌকা বাঁধা। নৌকায় বসে সবাই মিলে খেলা করছে। হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ। নদীর ঘাটে এসে দেখে আম্বিয়া নৌকা থেকে পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। অন্যান্য বান্ধবীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউই তাকে নদী থেকে তুলতে পারছে না। অবশেষে আম্বিয়ার চাচা নদী থেকে আম্বিয়াকে তুলে আনল। বেঁচে গেল আম্বিয়ার জীবন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিশু মারা যায়। এদের বয়স ২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এই বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। দেশে শিশুমৃত্যু রোধে এবং বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং তাতে সফলও হয়েছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দেশে ৫ বছরের কম বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। এরপরই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর স্থান প্রায় ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে সফলতার দিক থেকে ডায়রিয়ায় মৃত্যুরোধে বাংলাদেশ এক নম্বর। গণটিকা দেয়ার কারণে ডিপথেরিয়া বলতে গেলে একেবারেই নেই। ধনুষ্টংকার এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য এদেশে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এর তিনটিই বাংলাদেশের সাফল্যের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। এগুলো হলো-পুকুরের পাড়ে বেড়া দেয়া, শিশুর দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং শিশুকে সাঁতার শেখানো।

শিশুদের সাঁতার শেখার গুরুত্বের ওপর স্কুলের শিক্ষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিটি মানুষের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন। সাঁতার একটি উত্তর ব্যায়াম। আর এ কারনে প্রতিটি মানুষের পানিতে সাঁতার কাটা অত্যান্ত জরুরি। সাঁতারের মাধ্যমে অনেক রোগ ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিক্ষকেরা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে তুলে ধরতে পারেন।

একজন মানুষ সাঁতার জানলে কি কি সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং সাঁতার না জানলে কি কি অসুবিধাগুলো সম্মুখীন হতে পারে তা বিভিন্ন মিডিয়ার/গণমাধ্যমের প্রচারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এর ফলে মানুষ সাঁতার কাটতে উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুমৃত্যু কমাতে প্রসূতিদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। এ সময় স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শের সংগে শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। এছাড়া সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যে সকল এলাকায় ডোবা, নালা, পুকুর অথবা নদী আছে। সে সকল এলাকার মা, বাবাসহ পরিবারের সকল শ্রেণীর মানুষদের সচেতন হতে হবে, যাতে কোনো শিশু পানির দিকে যেতে না পারে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তা হলেই আমাদের শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পুলিশের বিশেষ অভিযানে সারাদেশে গ্রেফতার ১,৫৯৮
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন কাঠামোসহ নম্বর বণ্টন প্রকাশ
প্রথম জয়ের লক্ষ্যে কাল মুখোমুখি আরব আমিরাত ও ওমান
ফেব্রুয়ারিতেই মহোৎসবের জাতীয় নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা
ইনু-হানিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল ২৮ সেপ্টেম্বর
হংকংকে হারিয়ে সুপার ফোরের পথে এগিয়ে যেতে চায় শ্রীলংকা
বগুড়ায় দু’টি খাবারের হোটেলকে জরিমানা
মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাৎ : ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
মুন্সীগঞ্জে অবৈধ চায়না দুয়ারী জাল জব্দ
জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান উপলক্ষে রাসিকে এ্যাডভোকেসি সভা
১০