ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বিস্তারিত এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন এবং ঢাকা মহানগর ভবন নির্মাণ বিধিমালা-২০২৫ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা কমিটি।
আজ রোববার রাজধানীর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রাজউক প্রণীত ড্যাপ বাস্তবায়ন তদারকি এবং প্রয়োজনে সংশোধনের সুপারিশ প্রণয়ন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
বৈঠকে প্রদত্ত অনুমোদনের ভিত্তিতে ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কাবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ড্যাপ সংশোধনের অংশ হিসেবে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার), জনঘনত্ব, বন্যা প্রবাহ অঞ্চল ও কৃষিজমি সংরক্ষণসহ পরিবেশ সংবেদনশীল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে নতুন বিধানাবলির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত বিধান অনুযায়ী রাজউক আওতাধীন প্রায় সব এলাকাতেই ফার ও জনঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। পূর্ববর্তী ড্যাপে কৃষিজমিতে সীমিত পরিসরে নাগরিক সুবিধা স্থাপনের অনুমতি থাকলেও বর্তমান সংশোধনীতে সেই অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। কৃষিজমি সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যমান ড্যাপে ‘মুখ্য জলস্রোত’ ও ‘সাধারণ জলস্রোত’ নামে দুটি শ্রেণি থাকলেও নতুন সংশোধনীতে তা একীভূত করে ‘বন্যা প্রবাহ অঞ্চল’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই এলাকায় পরিবেশগত ভারসাম্য ও পানি ধারণক্ষমতা রক্ষার স্বার্থে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
একই সঙ্গে ট্রানজিট অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি), রিজেনারেশন এবং ব্লকভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে ফার প্রণোদনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ড্যাপ সংশোধনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি-২০২০) এবং ড্যাপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা মহানগর ভবন নির্মাণ বিধিমালা-২০২৫ খসড়ারও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নগর উন্নয়নের গতি ও বাস্তব প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ভয়েড স্পেস, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদন, জনঘনত্ব ইত্যাদি বিষয়ে বিধি-বিধান পরিমার্জন করা হয়েছে।
দুর্যোগ ঝুঁকি বিবেচনায় ভবন নির্মাণ অনুমোদনের সময় স্থাপত্য নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত ও অন্যান্য প্রকৌশল নকশার অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রাহক হয়রানি কমাতে বিশেষ ও বৃহদায়তন প্রকল্পের জন্য আলাদা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না-নির্মাণ অনুমোদনের সুপারিশ প্রাপ্তির পরই ফি জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পাঁচ কাঠা বা তার বেশি আয়তনের জমিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণে উৎসাহ দিতে ‘গ্রিন বিল্ডিং’ প্রণোদনা সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি আপিল কমিটি গঠন, অনুমোদন প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন এবং সময়সীমা নির্ধারণের বিধানও সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির গত ১৯ মার্চের সভায় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তা পুনরায় যাচাই-বাছাই শেষে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রায় ৩৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করে আজকের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।