
ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মাথায় সাদা ক্যাপ, চোখে কালো সানগ্লাস, সাদা হিজাব পরা গিসা বাইবরদির স্নিগ্ধ হাসিতে যেন ইরানি গোলাপের সুবাস। তীর ২৪তম এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপের মেয়েদের দলগত কম্পাউন্ড ইভেন্টের ব্রোঞ্জ নিষ্পত্তির ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছে ইরান। যে কারনে ইরানী নারী আর্চারদের আনন্দটা ছিল একটু বেশী।
এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম পদক নিশ্চিতের পর ইরানি মেয়েদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা স্টেডিয়ামে হেমন্তের শেষ বিকেলের আলো ইরানি আর্চারদের চেহারায় পড়তেই যেন ঝিলিক দিয়ে উঠছিল। টার্গেট বোর্ড থেকে তীর তুলে আনার পর ডাগ আউটে ফিরতেই কোচ ও স্টাফরা জড়িয়ে ধরলেন গিসাসহ অন্য মেয়েদের।
ইরানের এই দলে গিসা ছাড়াও খেলেছেন ফাতিমা বাঘেরি ও শিভা বখতিয়ারি। গিসা এর আগে এশিয়ান আরচ্যারীতে দুবার পদক জিতলেও ফাতিমা ও শিভার জন্য প্রথম পদক জয়ের ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই গিসার চেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত ছিলেন এই দুজন।
তেহরানের আর্চার গিসা পদক জয়ের আগের মুহূর্তের অনুভূতির কথা বললেন ম্যাচ শেষে। রোমাঞ্চিত গিসা বলেন, “আমাদের এই ফলাফলে আমি খুব খুশি। আসলে আমরা সবাই ভালো খেলেছি। যদিও এখানে বাংলাদেশের সবাই তাদের খেলোয়াড়দের অনেক বেশী উৎসাহ দিচ্ছিল। আমরা তবুও ভালো খেলার চেষ্টা করেছি।”
এর আগে ঢাকায় এশিয়ান আরচ্যারীতে রূপা ও ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। ঢাকা সব সময় তার জন্য সৌভাগ্যের ভেন্যু, এমনটাই স্বীকার করলেন গিসা।
১২ বছরের আরচ্যারী ক্যারিয়ারে গিসার একটাই স্বপ্ন অলিম্পিকে পদক জেতা, “শুধু আমি নই যে কোনও অ্যাথলেটের জন্যই এটা অনেক বড় স্বপ্ন।”
ফাতিমা বাঘেরি মাত্র আড়াই বছর হলো আরচ্যারী খেলছেন। প্রথমবার কোনও আন্তর্জাতিক পদক জিতে খুশি তিনি, “শেষ শটের সময় আমি মোটেও নার্ভাস ছিলাম না- শুধু সেরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটু প্রেসার ছিল যদিও। তবে শেষ পর্যন্ত আমার প্রথম মেডেল জিতে রোমাঞ্চিত।” জানালেন তার ছোট বোনও আরচ্যারি খেলেন। খেলার পাশাপশি ইরানের একটি কলেজে শরীর বিজ্ঞানে স্নাতক পড়ছেন।
দলের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা শিভা বখতিয়ারি। তিনি জানালেন ইরানের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অনেক কঠিন। পদক জয়ের পর বললেন, “ ইরান দলে জায়গা পাওয়া সহজ না। এখানে অনেক ভালো মানের আর্চার আছে। দলে ঢুকতে প্রচুর লড়াই করতে হয়। প্রচুর কম্পিটিশন। সিলেকশন প্রসেসও খুব কঠিন। ন্যাশনাল টিমের ক্যাম্পে পারফরম্যান্স শো করতে হয়।”
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের শহর আমেদান থেকে উঠে আসা এই আর্চার স্বপ্ন দেখেন অলিম্পিকে খেলার। সেই যাত্রায় একটু একটু করে এগিয়ে যেতে চান তিনি।
ইরানের এই তরুণ নারী আর্চারদের চোখে এখন একটাই বড় স্বপ্ন- অলিম্পিকের পোডিয়াম। ঢাকার এই সাফল্য সেই দীর্ঘ যাত্রারই একটি সফল এবং সুবাসিত পদক্ষেপ হিসেবে হয়তো ভবিষ্যতে বিবেচিত হবে।