বাসস
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৭
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৯

পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার সাংবাদিক আতিকুর রহমান, দাবি স্ত্রী মহুয়ার

প্রতিবেদন:  শুভব্রত দত্ত 

বরিশাল, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে লেখালেখি করাটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমানের। এ কারণে তিনি গত ৫ আগস্ট টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন।  

আতিকুর রহমানের স্ত্রী মহুয়া বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে এ কথা জানিয়ে বলেন, গত ৫ আগস্ট সকালের দিকেই তিনি যাত্রাবাড়ির উদ্দেশ্যে শনিরআখড়ার পলাশপুরের বাসা থেকে বের হন। ঢাকার পলাশপুর, কদমতলী, দনিয়া এলাকা থেকে গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ সংগ্রহ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। যাত্রাবাড়ি এলাকায় গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতার কাতারে আতিকুর  রহমান (৩৪) নিজেও শামিল হয়ে যান। এ সময়ে যাত্রাবাড়ির হাজারো জনতার সাথে আতিকুরের ছোট ভাই সোলেমানও ছিলেন। 

সেদিনের কথা স্মরণ করে মহুয়া আরো বলেন, কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাওয়ার পরেও কোন যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। শত চেষ্টা করেও মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না আতিকুরকে। সোলায়মানও চেষ্টা করছিল। সন্ধ্যা থেকে বহু খোঁজা খুঁজির পর শেষে রাত প্রায় সাড়ে ১০ টার দিকে তার সন্ধান মেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। 

পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, পুলিশ একেবারে সরাসরি আতিকুরের কপাল বরাবর গুলি করেছিল। এতে ঘটনাস্থলেই  নিহত হন তিনি। পরে ৬ আগস্ট বিকেলে শহিদ সাংবাদিক মো: আতিকুর রহমানের নামাজে জানাজা শেষে রাতে উপজেলার খুন্নাগোবিন্দপুর গ্রামের ঘোলের হাট দেওয়ান বাড়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

মহুয়া বলেন, আমি নিজেও বাবা হারা। আমাদের দুটি সন্তান। এক ছেলে আদিবা আব্দুল্লাহ (৪) ও এক মেয়ে আজিমা রহমান (৬)। ছেলেটি এখনও প্রায় রাতেই ঘুমানোর সময় বাবা-বাবা বলে ডাকে। আমি বহু চেষ্টা করেও শিশু সন্তান দুটিকে কোন বুঝ দিতে পারি না। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তি ছিল আতিকুর। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন সাহসী সাংবাদিক। আমি তাকে কোন দিন কারোর সাথে সাংবাদিকতায় আপোষ করতে দেখিনি।

বতর্মানে মহুয়া তার এতিম ছোট দুটি সন্তান নিয়ে বরিশালে বসবাস করছেন।  

মো: আতিকুর রহমান বরিশালের হিজলা উপজেলার খুন্নাগোবিন্দপুর গ্রামের পিতা মো: নাসির উদ্দিন (৬৮) ও মাতা নূরজাহান বেগমের(৬০) প্রথম পুত্র। তার আরো দুই ভাইবোন রয়েছে। বোন সুরমা বেগম (৩২) বিবাহিত। ছোট ভাই মো: সোলেমান (৩০), চাকুরি করেন। 

আতিকুর রহমান সর্বশেষ তিনি দ্য বিজনেস পোস্টে চাকুরি করতেন বলে তার ভাই মো: সোলেমান জানান।

সোলেমান আরো জানান, ভাই শহিদ হওয়ার পর তার পরিবারকে প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে দেয়া হয় দুই বান ডেউটিন, ২৫ হাজার টাকা এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে দেয়া হয় ৫ লাখ টাকা। 

তিনি বলেন, আতিকুরের হত্যা বিষয়ে মহুয়া বেগম বাদী হয়ে কদমতলী থানায় মামলা করেছেন। মামলার আইডি নম্বর ২২৭২৫।

এ সময় তিনি তার ভাই আতিকুরের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।