ভুলতে পারছেন না, এখনও কাঁদেন শহিদ রুবেলের মা

বাসস
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ আপডেট: : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০

প্রতিবেদন: ভুবন রায় নিখিল  

নীলফামারী, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : রুবেলের মা ছেলেকে ভুলতেই পারছেন না। কোনভাবেই কান্না থামছে না তার। ঘটনার পর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। ছেলের শোকে এখনও কাঁদেন মা। ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতির কথা মনে এলেই দু’চোখ ছাপিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তার।

ছেলে বলেছিল ‘আব্বা-আম্মা তোমরা টেনশন করো না। ভাইয়ের লেখাপড়া আর বাড়ি করার দায়িত্ব আমার। ছোট ভাইকে লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করবো। তখন অনেক সুখ আসবে আমাদের ঘরে’। ছেলের এমন আশ্বাসে অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন রিকশা চালক বাবা মো. রফিকুল ইসলাম (৫০) ও গৃহিণী মা মোছাম্মৎ মিনি খাতুন (৪৫)। এজন্য গ্রাম ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা ঢাকা শহরে। সেখানে আদাবর এলাকায় থেকে ছেলে কাজ করছিলেন পোশাক কারখানায়। আর বাবা নেমেছিলেন রিকশা চালানোর পেশায়।

বাবা-ছেলের জমানো টাকায় ধরতে চেয়েছিলেন অধরা স্বপ্নগুলো। কিন্তু ৫ আগস্ট একটি বুলেটের আঘাত ভেঙ্গে তছনছ করে দেয় সকল স্বপ্ন।

সেদিন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন শহিদ রুবেল ইসলাম(১৯)। বেলা ১১টার দিকে উত্তাল মিছিল পৌঁছে আদাবর থানার সামনে। সে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এ সময় গুলিবিদ্ধ হলে আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।

নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা আরাজীপাড়া গ্রামে শহিদ রুবেল ইসলামের বাড়ি। স্বপ্ন ছিল আয়-রোজগার করে লেখাপড়া শেখাবেন ছোট ভাইকে।

কিনবেন বাড়ির ভিটা, গড়বেন পবিারের স্থায়ী ঠিকানা। এজন্য চাকুরি নিয়েছিলেন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। এগুচ্ছিলেন স্বপ্ন পূরণের পথে। ছোট ভাই মো. রনি ইসলামকে পাড়াচ্ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্বপ্ন পূরণে বাবা-মাকে নিয়ে বসবাস করতেন ঢাকার আদাবরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়।

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মা মিনি খাতুন বলেন,‘বাসা থাকি বাইরোত যাবার সময় কইলো আম্মা ছোটভাইর তিন মাসের বেতন বাকি হইছে। মাদ্রাসার স্যার ফোন দিয়া কইছে।

একটা ব্যবস্থা করি বেতনের টাকা পাঠেবার লাগিবে। কিন্তু মোর ছাওয়াতো (ছেলে) আর ফিরি আসিলো না’।

বাবা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আদাবর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন রুবেল ইসলাম। রাতের ডিউটি থাকায় সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে বাড়িতে ফিরতেন। তাকে রেখে তিনি নিজে বেড়িয়ে যেতেন রিকশা চালানোর কাজে। ৫ আগস্ট ফিরতে দেরি হওয়ায় সকাল নয়টার দিকে ফোন করে খবর নেন ছেলের।

এরপর বাসায় এসে ছেলে বেলা ১১টার দিকে যোগ দেন আন্দোলনে। 

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন,‘ছেলে ফোনে কইছিল আব্বা কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি। কথায় শুনে নিশ্চিন্ত মনে রিকশা চালানোর কাজে যাই। বেলা সাড়ে তিনটার দিকোত খবর পাও  ছেলে মিছিলোত যায়া আদাবর থানার সামনোত গুলি লাগি আহত হইছে। তারপর দিক-বিদিক হাসপাতাল যায়া দেখি ওর অপারেশন শুরু হইছে’।

তিনি জানান, চিকিৎসা চলার পর সাত আগস্ট শ্যামলীর সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মৃত্যু হয় তার। এরপর সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে লাশ এনে রাত সাড়ে নয়টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে  শহিদ রুবেল ইসলাম ছিলেন তৃতীয়। লেখাপড়া করেছিলেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। বিয়ে হয়েছে তার তিন বোনের। ছোট ভাই রনি ইসলাম পড়ছে এলাকার একটি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে। ঢাকায় অবস্থানের কারণে রনিকে রেখেছিলেন ওই মাদ্রাসার আবাসিকে। এরপর একমাত্র অবলম্বন রুবেল ইসলাম আন্দোলনে শহিদ হলে গ্রামে ফিরে আসেন তার বাবা-মা। নিজেদের বসতভিটা না থাকায় বর্তমানে ছোট ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন ।

বিভিন্ন সহযোগিতার কথায় বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, লাশ আনার সময় ২৫ হাজার, জেলা প্রশাসন ৩০ হাজার, আস সুন্না ফাউন্ডেশন এক লাখ, জামায়াতের পক্ষে দেড় লাখ এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকার সহযোহিতা পেয়েছেন এ পর্যন্ত। সে টাকা থেকে চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ বাবদ দেনা পরিশোধ করেছেন এক লাখ টাকা।

গোড়গ্রাম ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন,‘শহিদ রুবেল ইসলামের পরিবারের খোঁজ খবর রাখছি আমরা। আমাদের সুপারিশে তার বাবাকে এলাকার নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আহসান হাবীব লেলিন চাকুরি দিয়েছেন। পরিবারটির কষ্ট লাঘবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’।

গোড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম বলেন,‘পরিবারটি একেবারেই অসহায়। ছেলের অকাল মৃত্যু পরিবারটিকে আরো দুর্ভোগে ফেলেছে।

আমরা সকলে পাশে থেকে তাদের দুর্ভোগ কমাতে চাই’।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না : গোলাম পরওয়ার
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মোশাররফ গ্রেফতার
আন্তঃবাহিনী আযান ও ক্বিরাত প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠিত
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করা হবে : মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পার্বত্য উপদেষ্টা
বাঞ্ছারামপুরে  নির্যাতনের শিকার শিশুটির চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে এলেন তারেক রহমান
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার : জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
জাফরুল্লাহ চৌধুরী তরুণদের কাছে অক্ষয় ও অমর হয়ে থাকবেন : ফারুক-ই-আজম
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এনফ্রেল প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
জাফরুর নতুন কমিটি : অডেন সভাপতি ও আকতারুল সাধারণ সম্পাদক
দেশের মানুষ হাসিনার দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার দেখতে চায় : শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি
১০