বাসস
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯

ভাইয়ের জন্য একটি স্থায়ী কর্মের ব্যবস্থা চান আহত সাজিদের বোন

আহত সাজিদ মণ্ডল (২০) -ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : আনিচুর রহমান

ফরিদপুর, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ফরিদপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে জেলার সিভিল সার্জনের সরকারি তালিকা অনুযায়ী আহতের সংখ্যা ৯০ জন। এদের মধ্যে কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউ রাবার বুলেটে আহত, কেউ সাউন্ড গ্রেনেডে আঘাতপ্রাপ্ত, আবার কারো বা হাত-পা ভেঙে গেছে। অনেকের চোখে আঘাত লেগেছে। হাতের পায়ের আঙুল ভেঙে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি সাজিদ মণ্ডল। 

শহরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ধুলদি গোবিন্দপুর গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা জাহাঙ্গীর মণ্ডলের (৫২) ছেলে সাজিদ। ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রথম বর্ষের (পাওয়ার) ছাত্র। দুই বোন এক ভাই তারা। দাদা, দাদিসহ পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন।

গত ৪ আগস্ট সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে বের হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সাজিদ মণ্ডল (২০)। থানা রোডে এসে সাউন্ড গ্রেনেড আর কাঁদানে গ্যাসের শিকার হন। আত্মরক্ষার জন্য পূর্বাখাবাসপুর হিতৈষী স্কুলের দিকে গেলে সেখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুণ্ডারা ভয়াবহ হামলা চালায়। মুখ বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে সারা শরীর থেঁতলিয়ে দেয়া ছাড়াও সাজিদের বাম হাত, ডান পা ও ডান হাতের আঙ্গুল ভেঙে দেয়। 

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা: শাহীন জোদ্দারের কাছে চিকিৎসা নেন তিনি। তার ডান হাতের আঙুল, বাম হাতের মাঝ বরাবর ও ডান পায়ের গোড়ালি থেকে টাকনুর মাঝামাঝি ভেঙে গেছে। ভাঙা হাত ও পা জোড়া লাগানোর জন্যে হাসপাতাল থেকে রড ও স্ক্রু ঢুকিয়ে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে এখন বাসায় রয়েছেন সাজিদ। দু’বছর পর হাসপাতাল থেকে রড ও স্ক্রু খুলে দেয়া হবে। এ সময়ে পুনরায় বড় একটি অপারেশন লাগবে।

সাজিদ এখন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার দশা খুবই করুণ। চিকিৎসা ব্যয়ই মিটছে না। পথ্য মিলবে কোত্থেকে? পুষ্টিহীনতার শিকার সাজিদের হাড়গোড় বেরিয়ে গেছে।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা ছাড়াও তারা খোঁজখবর রাখছে। দলটি একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে তাকে আরো কিছু আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এছাড়া ফরিদপুরের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকেও দেয়া হয়েছে কিছু আর্থিক সহায়তা।

সাজিদের মেজো বোন জোবাইদা জাহান তিয়া বলেন, ‘পরিচর্যা নার্সিং ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করেছি।। বিগত সরকারের সময় আমরা ছাত্রীরা নিরাপদ ছিলাম না। আমাদের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। সাজিদ গত বছর পুলিশের চাকরিতে চান্স পেয়েও কোটা জটিলতায় বাতিল হয়। সেই থেকে আমাদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়া।

আমি আন্দোলনে রেগুলার যেতে না পারলেও ছোট ভাইকে উৎসাহ দিয়েছি স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য আন্দোলনে যেতে।সাজিদ ছোট্ট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ে চাকরি করতো।ডাক্তার বলেছে ও আর আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় কোন কাজ করতে পারবে না। সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ভাইয়ের জন্য একটি স্থায়ী কর্মের ব্যবস্থা চান বোন।

ধার দেনায় চিকিৎসা করে অভাবের সংসারে ছেলেকে পড়াশোনা করাবেন কিভাবে মা ডলি বেগম (৪৬)। এমনিতেই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এখন ছেলের অসুস্থতার কারণে চিন্তার যেন শেষ নেই মায়ের। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী অনেকের থেকে টাকা-পয়সা ধার নিয়ে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক সময় না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।

সরকারের কাছে ছেলের স্থায়ী একটি চাকরির ব্যবস্থা করার আহ্বান সাজিদের মায়ের। 

দাদা রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে তা মানুষ করে না। ওরা দেশের অর্থ লুট করে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ওদের স্বার্থে ওরা যে কোন কাজ করেছে। স্বৈরাচারী সরকারের হায়েনা ছাত্রলীগ বাহিনী আমার নাতিকে তো মেরেই ফেলার পরিকল্পনা করেছিল। আল্লাহ বাঁচিয়েছে। ৮৪ বছর বয়স হয়েছে আমার। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখেছি। তখন বাংলাদেশের কোন মানুষকে দেশের কোন শাসক বা মানুষ কারো ওপর আঘাত করেনি। অথচ বিগত সরকার নিজ দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে।

তিনি তার নাতিকে যারা পিটিয়ে আহত করেছে তাদের বিচার চান। স্থানীয় বাসিন্দা অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং জেলা যুবদলের জয়েন সেক্রেটারি মো: নুরুল আলম বলেন, ওরা ২০২৪ সালের খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সাজিদদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা পুনরায় স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। সাজিদের পরিবার আর্থিকভাবে খুব দূর্বল। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছি। সরকারের কাছে দাবি ওর যেন একটি স্থায়ী কর্মের ব্যবস্থা হয় । 

এ বিষয়ে ফরিদপুরের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবরার নাদিম ইতু বলেন, ফরিদপুরে আন্দোলনে আহতদের জন্য আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। তার মধ্য থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা সাজিদকে সহযোগিতা করেছি।