শিরোনাম
নওগাঁ, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : শাকিল জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকেই নিথর দেহে ফিরে এলেন গ্রামে। এখন এখানেই শায়িত তিনি।
স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবেন। সংসারের উন্নতি করবেন। আয় রোজগার বাড়াবেন। কিন্তু এসব স্বপ্ন এখন অতীত। কারণ পুলিশের ঘাতক বুলেটে স্বপ্ন ভেঙে খান খান। তছনছ শাকিলের পরিবার।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে শাকিল আনোয়ার (৩৫) শহিদ হন।
হাসিনা সরকারের পতনের সংবাদে আশুলিয়া এলাকায় আনন্দমুখর হাজারো মানুষের মিছিল নামে। সেই মিছিলে শাকিলও অংশ নেন। মিছিলটি ঠিক আশুলিয়া থানার সামনে এলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে বেগম ফজিলাতুননেছা হাসপাতালে নেয়া হয়। ঐদিনই সেখানে তিনি মারা যান। রাতেই স্ত্রী সেখানকার লোকজনের সহযোগিতায় শাকিল আনোয়ারের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামে নিয়ে আসেন। পরদিন দুপুরে জেলার আত্রাই উপজেলার শ্রীধর গুড়নই গ্রামে সরকারি গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ শাকিল আনোয়ারের বাবা মোঃ আবেদ আলী ছেলে হত্যার বিচার চান।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের রক্তে গোসল করে শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে গেছে। পুলিশকে লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।
তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে সরকারের প্রতি আহবান তাঁর।
শাকিল আনোয়ার নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার শ্রীধর গুড়নই গ্রামের মোঃ আবেদ আলীর পাঁচ পুত্রের মধ্যে প্রথম। তাঁর দ্বিতীয় পুত্র সাখাওয়াত হোসেন ২০১১ সালে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বর্তমানে আবেদ আলীর তিন পুত্র সন্তান বাড়িতেই রয়েছেন। তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন কৃষি শ্রমিক এবং আবু তালহা ও আবু রায়হান রাজমিস্ত্রী’র কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
শাকিল আনোয়ার জীবিকার সন্ধানে ২০০০ সালে ঢাকায় পাড়ি জমান। রাজধানী শহরে তিনি একটি সিগারেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মায়ের অসুস্থতার কারণে বাড়ি এলে চাকরিটা চলে যায়। পরে অটোরিকশা চালিয়ে আয় উপার্জন করতে শুরু করেন। কিছুদিন আগে বিয়ে করেন তিনি।
স্ত্রী সালমা বেগমকে নিয়ে আশুলিয়া থানার রপ্তানি বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। যা আয় করতেন নিজের পরিবারের খরচ মিটিয়ে গ্রামে বাবাকেও কিছু পাঠাতেন। অন্য কাজের সন্ধানে ছিলেন তিনি।
এর আগে শাকিল আনোয়ার জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। কিন্তু কাগজপত্রের জটিলতায় তাকে ফেরত আসতে হয়েছে। আবারো পাসপোর্ট রেডি করেছিলেন বিদেশে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সব আশা আকাঙ্ক্ষা’র পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে। মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে সবকিছু।
মোঃ আবেদ আলী জানিয়েছেন, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে তারা পাঁচ লক্ষ টাকা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লক্ষ টাকা সহযোগিতা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ছেলে রোজগারের টাকা থেকে কিছু বাড়িতে দিতো। তাই দিয়ে সংসারের খরচ অনেকটাই মিটত। এখন কে দেবে এ টাকা? সংসার চালাতে আমাকে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মোঃ আবেদ আলী সকলের কাছে তিনি ও তার পরিবারের জন্যে দোয়া চেয়েছেন।