বাসস
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৪

আন্দোলনে হারিয়েছেন চোখ, হৃদরোগে আক্রান্ত মল্লিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর পথে

আহত মল্লিক হাফিজুর রহমান লিটন- ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : আজাদ রুহুল আমিন 

বাগেরহাট, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : গত বছরের  জুলাই আগস্টে দেশ জুড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা তীব্র রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা জনরোষের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারত চলে যান। 

জুলাই আগস্টের আন্দোলনের এ সময়ে বাগেরহাটেও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতা। মিছিলে মিছিলে তারা উত্তপ্ত করে তোলে সড়ক, মহাসড়ক। ছাত্র-জনতা শেখ পরিবারের হেলাল, তন্ময় ও আওয়ামী দোসরদের বাধার প্রাচীর ভেঙে ফেলে। 

আন্দোলন ও প্রতিরোধের এ সংগ্রামে অংশ নেন বাস ড্রাইভার মল্লিক হাফিজুর রহমান লিটন (৪০)। তিনি বাগেরহাটের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের দেওয়ানবাটি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। 

গত ৫ আগস্ট বেলা ১ টা। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার মুহুর্তে শহরের প্রাণকেন্দ্র দশানিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের লাঠির বাড়িতে মল্লিক হাফিজের বাম চোখের পর্দা ফেটে যায় ও অনেকগুলো নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ হাসপাতালে একাধিকবার চোখের অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু মল্লিক হাফিজুরের বাম চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসকেরা ব্যর্থ হন।

এদিকে চিকিৎসা শেষে বাগেরহাটের নিজ বাসায় ফেরার পর গত ১৪ ডিসেম্বর রাত ১০ টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে অতিদ্রুত খুলনা আবু নাসের হাসপাতালে নেয়া হয়। তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। এখন হার্টে রিং পরানো দরকার। এদিকে চোখের চিকিৎসা করতে গিয়ে দ’ুলাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। তাও ধারদেনা করে। যদিও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকার আর্থিক অনুদান তিনি পেয়েছেন।  

মল্লিক হাফিজুরের স্ত্রীর নাম মিতা খাতুন (৩৫)। তিনি মুঠোফোনে বাসস প্রতিনিধিকে জানান, তার পুত্র সন্তান ইব্রাহিম (১০)। সে চতুর্থ শ্রেণি ও অপর পুত্র রাইহান (৯), ক্লাস থ্রিতে পড়ে।  তাদের পড়ার খরচ, সংসারের খরচ। কিন্তু একমাত্র উপার্জনকারী তাদের পিতা এখন বিছানায়।  এ অবস্থায় কি করে চলবে জীবন? 

তিনি আকুলভাবে এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। কিন্তু কে দেবে এর জবাব?

তিনি বলেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। সরকার এবং সমাজের বিত্তবানেরা যদি আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে তাহলে অন্তত বেঁচে থাকার ভরসা পাই। 

মল্লিক হাফিজুরের বোন নিগার সুলতানা লিপি (৪৪) বলেন, ছোট বেলা থেকেই ভাই মল্লিক ছিলেন ভীষণ প্রতিবাদী। দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে তার ছিল সক্রিয় ভূমিকা। ভাইটি আমার চিরদিনের জন্য চোখ হারিয়ে ফেলেছে। এখন বেকার। অথচ তার ওপর রয়েছে  স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা মাকে দেখভালের দায়িত্ব। 

আহত মল্লিক হাফিজুর রহমানের পিতা মল্লিক মনিরুল ইসলাম (৬৫) কোন কাজ করতে পারেন না। মা আনজিরা বেগম (৫৫) গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে মল্লিক সবার ছোট । বড়ভাই মাহফুজুর রহমান (৫০) ও দ্বিতীয় নিগার সুলতানা লিপি, বিবাহিত। 

এক চোখে না দেখতে পাওয়া মল্লিক হাফিজুর রহমান লিটন ভীষণ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তিনি হাসপাতাল ছেড়ে এখন বাড়িতেই অবস্থান করছেন। কারণ হাসপাতালের খরচ যোগাবে কে? 

তিনি বলেন, আমার জীবনটা ফুরিয়ে আসছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছি না।  আমার স্ত্রী, সন্তান বৃদ্ধ বাবা মাকে কে দেখবে? সরকারি ও বেসরকারিভাবে যদি সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যেতো তাহলে আমার পরিবারটি বেঁচে যেতো।

এদিকে দরিদ্র মল্লিক হাফিজুর রহমানের স্ত্রী মিতা খাতুন স্বামীর এ অবস্থায় এখন চারদিকে কেবলি অন্ধকার দেখছেন। টাকা না পেলে স্বামীকে বাঁচানো সম্ভব নয়, এ কারণে দিন দিন তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হচ্ছেন।  

তিনি তার পরিবার ও স্বামীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে সকলের প্রতি আকুল আবেদন জানান।