বাসস
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৩
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৭

শাহিনের রক্তে উত্তাল হয়ে ওঠে সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগং সড়ক

শহীদ মো. শাহিন। ছবি : বাসস

প্রতিবেদন: শুভব্রত দত্ত

বরিশাল, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : শহিদ হোটেল শ্রমিক মো. শাহিনের বুকের তাজা রক্তে উত্তাল হয়ে উঠেছিল নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগং সড়ক এলাকা। সেইদিন এক দফা দবি আদায়ের লক্ষ্যে মুহূর্তেই ফুঁসে উঠে ছাত্র-জনতা।

বরিশালের হিজলা উপজেলার খুন্নাগোবিন্দপুর গ্রামের একাধিক স্থানীয়ের সাথে আলাপকালে প্রতিবেশীরা জানান, জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাড়া দিয়ে ফ্যসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতন আন্দোলন মিছিলের অগ্রভাগে অংশ নিয়ে শহীদ হন হোটেল শ্রমিক মো. শাহিন (২১)।

পেশায় হোটেল শ্রমিক মো. শাহিনের বুকের তাজা রক্তে উত্তাল হয়ে উঠেছিল নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগং সড়ক এলাকা। তার পিতার নাম মো. হাছান আলী রাঢ়ী ও মায়ের নাম নাজমা বেগম। শাহিন মা-বাবার দুই ছেলের মধ্যে বড়। তার ছোট ভাইয়ের নাম রুবেল।

স্থানীয়রা আরও জানান, বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার খুন্নাগোবিন্দপুর গ্রামের শহিদ মো. শাহিন সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগং সড়ক সংলগ্ন একটি হোটেলে (অনাবাসিক) কর্মরত ছিলেন। মাঝে মাঝে ফোন দিত আর বলতো ‘চাচা, ঢাকা-নারায়নগঞ্জ এলাকায় যা লক্ষ্য করছি। জয় আমাদের নিশ্চিত। এই ফ্যাসিস্ট সরকার হঠাতে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা এলাকাবাসী শহীদ শাহিনের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ প্রসঙ্গে সন্তানহারা পিতা মো. হাছান আলী রাঢ়ী আবেগ-আপ্লুত ও কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে মো. শাহিন দূর থেকে ছাত্র-জনতার মিছিল দেখলেই কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে যোগ দিতেন মিছিলে। কোথা থেকে এই উৎসাহ পেতো আমার জানা নেই। তবে মাঝে মাঝে ফোনে বলতো আব্বু এই জালেম শেখ হাসিনা সরকারকে হটাতে হবে।’

মো. হাছান আলী রাঢ়ী আরও বলেন, ১৯ জুলাই নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগং সড়কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের ছোড়া বন্দুকের গুলিতে আহত হন শাহিন। ১৯ জুলাই প্রায় রাত সাড়ে ৭ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন মো. শাহিন।

২০ জুলাই নামাজে যানাজা শেষে শহিদ মো. শাহিন’কে দেশের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার খুন্নাগোবিন্দপুর গ্রামে নিজ বসতবাড়ি সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ মো. শাহিনের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলা খুন্নাগোবিন্দপুর গ্রামে। মামলা নং ২২৭২১।

তিনি বলেন, যারা আমার সন্তানের প্রাণ কেড়ে নিল তাদের বিচার চাই আমি। বর্তমান সরকারের কাছে পিতা হিসেবে আমার একটাই দাবি- অবিলম্বে শহিদ মো. শাহিনসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল শহিদদের প্রকৃত খুনিদের বিচারের আওতায় এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক।

এ বিষয়ে বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খশরু বাসসকে বলেন, শহিদ মো. শাহিনের পরিবারকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। একই সাথে সামনের দিনগুলোতেও জামায়াত ইসলাম পরিবারটির পাশে থাকবে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে শহিদদের প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.জাহাঙ্গীর হোসেন বাসসকে বলেন, জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান সরকার।

তিনি বলেন, ১৯ জুলা মো. শাহিন শহীদ হওয়ার পর পরই পরিবারটিকে প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় হিজলা উপজেলা কার্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই বান ডেউটিন ও নগদ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

এরপর ২৩ নভেম্বর ২০২৪ জুলাই, বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন-এর সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের শহীদের মা-বাবার হাতে প্রায় ৫ লাখ টাকার চেক হস্থান্তর করেন।