ছাত্র আন্দোলনে বড় সন্তান রাহুলকে হারিয়ে শোকে পাথর মা রুমা আক্তার

বাসস
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৭ আপডেট: : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৮
শহীদ আয়মান হোসেন রাহুল -ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : এসকে রাসেল

কিশোরগঞ্জ, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে ছয় মাস আগে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে ঢাকায় যান আয়মান হোসেন রাহুল (২২)। ঢাকার রামপুরা এলাকায় একটি জুতার দোকানে কাজ নেন তিনি। দরিদ্র পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে না পারলেও জীবন দিয়ে দেশকে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত করার সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়েছেন যুবক আয়মান হোসেন রাহুল।

জানা যায়, গত ১৮ জুলাই ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন আয়মান হোসেন রাহুল। সেখানে টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকার রামপুরায় ভাড়া বাসায় চলে যান। বাসায় অবস্থার অবনতি হলে বাড়ি ফেরেন রাহুল।

বাড়িতে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে ২২ জুলাই বাজিতপুরের ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হলে ৭ আগস্ট সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তবে একই দিন বিকেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আবারও জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। ৮ আগস্ট বিকেলে ঢাকায় নেওয়ার পথে নরসিংদী সদর এলাকায় মারা যান আয়মান হোসেন রাহুল। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদদের তালিকায় তার নাম রয়েছে ৮ নম্বরে।

আয়মান হোসেন রাহুল (২২) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের পাটুলি বালুর মাঠ এলাকার ট্রলার চালক মো. মিজান (৪৫) ও গৃহিণী রুমা আক্তার (৩৭)-এর বড় সন্তান। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন বড়। ছোট ভাই মো. রাতুল (১৭) বাবার সঙ্গে কাজ করেন। রুবাইয়া (১৪) মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সবার ছোট বোন ছয় বছর বয়সী সুরাইয়া এখনও পড়াশোনা শুরু করেনি।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের পাটুলি বালুর মাঠ এলাকায় রাহুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা মো. মিজান ও ছোট ভাই রাতুল কাজের জন্য বাইরে রয়েছেন। বাড়িতে মা রুমা আক্তার ও বৃদ্ধা দাদি লালবানু বসে আছেন। ছোট বোন রুবাইয়া মাদ্রাসায় গেছে, আর সুরাইয়া পাশের বাড়িতে খেলছে। সুরাইয়া এখনও বোঝে না যে তার বড় ভাই রাহুল চিরতরে হারিয়ে গেছে।

শহীদ আয়মান হোসেন রাহুলের মা ও দাদি   -ছবি: বাসস

মা রুমা আক্তার বড় সন্তান রাহুলকে হারিয়ে শোকে পাথর। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা রাহুল খুব ভালো ছেলে ছিল। অল্প কিছু লেখাপড়া করেছে। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ছয় মাস আগে ঢাকায় যায় কাজ করতে। সেখানে কাজ করে নিয়মিত টাকা পাঠাত। ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তাতে যোগ দেয় রাহুল। টিয়ার গ্যাসে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। হাসপাতালে ভর্তি ছিল কয়েকদিন। বাড়ি আনার পর অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তাকে ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় নেওয়ার পথেই আমার বাবা মারা যায়।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছিল, আমার বাবার ভেতরে সব নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তাকে আর বাঁচানো যায়নি। এখনও প্রতিদিন আমার বাবার কথা মনে পড়ে। যে সন্তান হারিয়েছে, সেই বোঝে এই কষ্ট কতটা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে আমার বাবা রাহুল হত্যার বিচারের দাবিতে মামলা করেছি। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

তিনি জানান, ‘এখনও কোনো সরকারি অনুদান পাইনি। বিএনপির পক্ষ থেকে ১ লাখ এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছি। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে আমরা বাঁচতে পারব।’

শহীদ রাহুলের দাদি লালবানু বলেন, ‘এলাকার কেউ আমার নাতিকে খারাপ বলতে পারবে না। সে কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। আমার নাতি কোথায় হারিয়ে গেল! আর তো রাহুল বাড়ি ফিরবে না। আমার নাতিকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না : গোলাম পরওয়ার
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মোশাররফ গ্রেফতার
আন্তঃবাহিনী আযান ও ক্বিরাত প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠিত
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করা হবে : মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পার্বত্য উপদেষ্টা
বাঞ্ছারামপুরে  নির্যাতনের শিকার শিশুটির চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে এলেন তারেক রহমান
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার : জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
জাফরুল্লাহ চৌধুরী তরুণদের কাছে অক্ষয় ও অমর হয়ে থাকবেন : ফারুক-ই-আজম
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এনফ্রেল প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
জাফরুর নতুন কমিটি : অডেন সভাপতি ও আকতারুল সাধারণ সম্পাদক
দেশের মানুষ হাসিনার দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার দেখতে চায় : শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি
১০