এখনও মাথায় নয়টি গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন আলাউদ্দিন

বাসস
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৭
আহত মো. আলাউদ্দিন (৩২) - ছবি- বাসস

প্রতিবেদন : আল-আমিন শাহরিয়ার 

ভোলা, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনে দারি আদায়ের বিরামহীন মিছিলে হাজারো জনতার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন টগবগে যুবক আলাউদ্দিনও। ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কচুয়াখালী এলাকার ৩২ বছর বয়সী যুবক মো. আলাউদ্দিন। 

বিগত দুই বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন তিনি। লেগুনা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এ রোজগার দিয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সব কিছু ভালোই চলছিল তার। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের ছোড়া ৩৫ টি ছররা গুলি বিদ্ধ হয় আলাউদ্দিনের শরীরে। এর মধ্যে মাথায়ই ঢুকেছে ১১টি।

৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করে ২৬ টি গুলি বের করতে পারলেও এখনও মাথার ভেতর রয়ে গেছে আরো ৯টি গুলি। মাথার ভেতর থাকা এতগুলো গুলি নিয়ে চরম যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন আলাউদ্দিন।

তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো ১৯ শে জুলাই লেগুনা চালানোর উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হই। তখন রাজধানী ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে উত্তাল। তবু পেটের তাগিদে বের হই। বের হয়ে দেখি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ শুধু শুধু নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলছে। তাই নিজেকে আর সামলাতে পারিনি, নিজেও আন্দোলনে সামিল হয়ে যাই। 

তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরের আল্লাহ্ করিম মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অংশ নিয়ে পুলিশ বক্সের সামনে যাই। তবে সেখানে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে হিংস্র্র পুলিশ। আমার মাথা, বুকে ও কাঁধে বিদ্ধ হয় পুলিশের ছোড়া ৩৫ টি ছররা গুলি। এর মধ্যে ১১টি গুলিই মাথায় ঢুকে যায়। এরপর অপারপশনের মাধ্যমে কয়েকটি গুলি বের করতে পারলেও প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণে মাথায় বিদ্ধ অন্যসব গুলিগুলো বের করতে পারিনি।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গত ৩০শে সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে গেলে মাথার ভেতরের দু’টি গুলি বের করেন চিকিৎসক। বাকি ৯টি গুলি বের করলে সমস্যা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় চিকিৎসক সেগুলো আর বের করেননি।

সেই চিকিৎসকের কথায় বুঝতে পেরেছি, যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এই গুলি মাথায় নিয়েই থাকতে হবে। তবে গুলি থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই হুটহাট মাথায় তীব্র ব্যথা হয়, মারাত্মক যন্ত্রণায় ভোগি। ওই ব্যথা সহ্য করতে পারি না। শুনেছি আন্দোলনে গিয়ে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে আমি এখন পর্যন্ত এক পয়সাও পাইনি।

আলাউদ্দিন আরও বলেন, আমি অনেক অসহায়। কারণ, ছোটবেলায়ই বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর নানুর কাছে বড় হয়েছি। আরেক ভাইসহ আমাদের নিয়ে নানু অনেক কষ্ট করেছেন। গ্রামে যেখানে থাকি সেটা নানুরই জমি। নানুর সম্পত্তি বলতে ওই ৬ শতাংশ জমিটুকুই। সেই জমির অংশীদার পাঁচজন। এখন হয়ত নানু বেঁচে আছেন বলে কেউ কিছু বলছেন না। নানুর মৃত্যুর পর হয়ত আর সেখানে থাকতে পারব না। সরকারিভাবে অসহায় মানুষকে জমিসহ ঘর দেয়া হয় বলে শুনেছি। সেখান থেকে একটি ঘর পেলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নিজের একটি স্থায়ী বসতি আর ঠিকানা হতো।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়েছি দেশের বৈষম্য দূর এবং প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে। সেই আন্দোলন সফলও হয়েছে। তবে এখন আমি জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। তাই সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আমার মাথার ভেতর এখনও রয়ে যাওয়া গুলিগুলো বের করতে আর্থিক সহযোগিতা এবং বাকি দিনগুলো যেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবে পার করতে পারি, সেজন্য আমাকে জমিসহ সরকারি একটি ঘর প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। 

আলাউদ্দিনের ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নানু মোসাম্মৎ জমিলা খাতুন বাসসকে জানান, ছোটবেলা থেকে আমার কাছে রেখে ওদের বড় করেছি। পরে আমার জমিতেই থাকতে দিয়েছি। তবে আমার মৃত্যুর পর ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা জানি না। এই জমি তো ওদের না। এই সামান্য জমিটুকুর অংশীদারও অনেক। সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করলে কিছুটা হলেও ভালো থাকবে। আমি নিজে বয়স্ক হলেও ভাতা পাই না। আমাকে সরকারিভাবে যেকোনো একটি ভাতা প্রদানের অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ বসসকে বলেন, সরকারিভাবে আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জেনেছি। তবে এজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করে আমাদের কাছে একটি কপি জমা দিতে হবে। এরপর আমরা তা স্থানীয়ভাবে তালিকাভুক্ত করব। 

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসসকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহতদের তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায়ই শেষ হওয়ার দিকে। এটির কাজ সমাপ্ত হলে তাদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথ মূল্যায়নে কার্যকর ভূমিকা নেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না : গোলাম পরওয়ার
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মোশাররফ গ্রেফতার
আন্তঃবাহিনী আযান ও ক্বিরাত প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠিত
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করা হবে : মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পার্বত্য উপদেষ্টা
বাঞ্ছারামপুরে  নির্যাতনের শিকার শিশুটির চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে এলেন তারেক রহমান
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার : জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
জাফরুল্লাহ চৌধুরী তরুণদের কাছে অক্ষয় ও অমর হয়ে থাকবেন : ফারুক-ই-আজম
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এনফ্রেল প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
জাফরুর নতুন কমিটি : অডেন সভাপতি ও আকতারুল সাধারণ সম্পাদক
দেশের মানুষ হাসিনার দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার দেখতে চায় : শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি
১০