সেলফোনে বাবার ছবি দেখলেই ‘আব্বু যাব’ বলে বায়না ধরে শিশু ইয়াজ

বাসস
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৬ আপডেট: : ০৪ মার্চ ২০২৫, ২১:১৮
শহীদ মো. ইমরান হোসেন। ছবি : বাসস

প্রতিবেদন: শুভব্র্রত দত্ত 

বরিশাল, ৩ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : সেলফোনে আজও বাবার ছবি দেখলেই আব্বু যাব বলে বায়না ধরে বরিশালের গৌরনদীর আড়াই বছরের শিশু ইয়াজ খলিফা। আব্বু শব্দটি এখনও বোঝার বয়স হয়নি শিশু ইয়াজের। সবে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শিখেছে। তবু তার মনে যেন বাবাকে কাছে পাওয়ার, তাকে দেখার এক প্রবল আকুতি। মা তাকে সান্ত্বনা দেয়, আব্বু বিদেশে গেছে। এই তো চলে আসবে। কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান শিশু ইয়াজ খলিফার অসহায় মা শান্তা মিয়া।

জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে স্বামী হারা অসহায় শান্তা মিয়া বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের সময় যখন সরকার সকল স্তরের মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর নির্মম দমন-পীড়ন শুরু করে তখন স্বামী মো. ইমরান হোসেন (২৯) মাঝে মাঝেই আন্দোলনে যোগ দিতেন। কিন্তু স্বামী না বললেও তিনি বুঝতে পারতেন। 

বরিশাল উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলা আগরপুর ডিগ্রি কলেজে স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন মো. ইমরান হোসেন। একই সাথে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। 

২০২৪-এর ১৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকার শাহাজাদপুরের বাসা থেকে কর্মস্থলে যোগদান করার উদ্দেশে বের হন ইমরান। পথে বাসার অদূরে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। ছাত্র-জনতা রাস্তা থেকে গুলিবিদ্ধ ইমরানকে উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভর্তি করেন। পরে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মো. ইমরান হোসেনকে মৃত ঘোষণ করে। 

পরে শহিদ মো. ইমরান হোসেনের পকেট থেকে মোবাইল ফোন পেয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকারা বাসায় ফোন দেন। ফোন পেয়ে সজনরা এসে লাশ সনাক্ত করেন। ২০ জুলাই নামাজে যানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শহিদ ইমরানের স্ত্রী অসহায় শান্তা মিয়া আরো বলেন, সেই থেকে শিশু ইয়াজ খলিফা সেলফোনে আজও আব্বুর ছবি দেখলেই বলে ‘আব্বু যাব’। আর তখনই সন্তান ইয়াজকে সান্ত্বনা দিতে হয়, ‘আব্বু বিদেশে গেছে, এই তো ক’দিনের মধ্যে চলে আসঊেষ্ফ বলে।

শান্তা মিয়া গৌরনদী সরকারি কলেজে ম্যানেজম্যন্ট বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী। পিতা মো. নজরুল ইসলাম ও মাতা সেলিনা বেগমের প্রথম পুত্র সন্তান শহিদ মো.ইমরান হোসেন ও দুই বোন চাঁদনী আক্তার (২৭) ও ছোট বোন শম্পা আক্তার (২৫)। দু’জনেই বিবাহিত। 

শহিদ মো. ইমরান হোসেন রাজধানীর বাড্ডা শাহাজাদপুর এলাকায় বসবাস করতেন। তার বাড়ি জেলার গৌরনদী উপজেলার ৫নং নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওর্য়াডের কালনা গ্রামে। 

বর্তমানে শান্তা মিয়ার সার্বক্ষণিক চিন্তা হলো- তিনি কি পারবেন তার ও পুত্রের পড়াশুনার খরচ মিটিয়ে একটি সুন্দর ভ্যবিষ্যত গড়ে তুলতে।

শহিদ মো. ইমরান হোসেনের পিতা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি স্ত্রী শান্তা মিয়া ও আড়াই বছরের একমাত্র শিশু পুত্র সন্তান ইয়াজ খলিফাকে রেখে শহীদ হন। ইমরানের শ্বশুর মো. টোকন মিয়া একজন ব্যংক কর্মচারী ও শাশুড়ি মিনু বেগম গৃহিনী। 

স্থানীয় উপজেলা নিবার্হী অফিসারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১০ হাজার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় এবং ২৩ নভেম্বর ২০২৪ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে : রিজভী
জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের দাবি, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন : প্রেস উইং
মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত একই পরিবারের ৪ জন
নড়াইলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা
একাত্তর ও জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকারীদের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে : ওয়ার্কার্স পার্টি
বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ দক্ষিণখানে
৯৭২২ দিনের অপেক্ষার অবসান দক্ষিণ আফ্রিকার
সাহিত্যিক আব্দুল মোমেনের মৃত্যুতে জামায়াতের শোক
আগামীকাল উদীচীর বর্ষা উৎসব
সোমবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
১০