প্রতিবেদন: ওমর ফারুক
রাজশাহী, ৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : আমার ছেলে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না, তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের যেন সঠিক বিচার হয়। সঠিক বিচার হলেই কিছুটা সান্ত্বনা পাব আমরা। আমার ছেলের আত্মাও শান্তি পাবে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর সাথে আলাপকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে
রাজশাহীতে শহীদ সাকিব আনজুমের মা রোকেয়া খাতুন।
তিনি বলেন, 'আমি চাই, আর যেনো কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। আমাদের এলাকার যারা ওইদিন ছাত্রদের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিল তারা এখনও এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এটা দেখে আমি আমার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।'
জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়ে ২০২৪-এর ৫ই আগস্ট রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টিতে ছাত্র-জনতার মিছেলে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় সাকিব আনজুম।
সাকিব আনজুম রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
রাজশাহী মহানগরীর হাদির মোড় এলাকার রায়নগরে সাকিব আনজুমের বাসায় সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। রোজা চলছে।
ক'দিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্ত এ বাড়িতে এখনও বইছে শোকের গুমোট হাওয়া। ইফতারে বসেও শহীদ সাকিব আনজুমের মা ও স্বজনরা অঝরে কাঁদেন।
সাকিবের ষাটোর্ধ্ব বাবা মাইনুল হক শোকে স্তব্ধ প্রায়। নিজের ব্যবসা থাকলেও তা আগের মতো ভালোভাবে করতে পারছেন না। তিনি পেশায় কসমেটিক পণ্যের ডিসট্রিবিউটর। বাসার নিচতলাতেই গোডাউন।
পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন সাকিব আনজুম। ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই চোখের কোণায় জল চলে এলো সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল হকের। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললেন যেন তিনি।
বাসসের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ সাকিব আনজুমরা তিন ভাই। এদের মধ্যে সাকিব ছিলেন সবার বড়। ছোট দুই ভাই- আকিব আনজুম ও আসিফ আনজুম কলেজে পড়েন।
সাকিবের মা বাসসকে বলেন, সাকিবকে গুলি করার পর মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওরা তাকে ঘিরে রেখেছিল। হাসপাতালে নিতে দেয়নি। মৃত্যুর পর লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিল। পরে ছাত্র ও সেখানকার এক বাড়ির মালিকের সহযোগিতায় আমার ছোট ছেলে লাশ নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, সাকিব আমার বড় ছেলে ছিল। পরিবারের সব কাজেই সাহায্য করত। সাকিবরা তিন ভাই-ই আন্দোলনে গিয়েছিল। আমি তাদের ঘরে রাখতে পারিনি। তাকে হারিয়ে এখন খুঁজে ফিরি সারাক্ষণ।
তিনি আরও জানান, খুবই মেধাবী ছিল ও। উচ্চ শিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মানুষরূপী জানোয়ারদের গুলিতে সে শহীদ হয়ে গেল। আল্লাহ যেন আমার ছেলের গুনাহ মাফ করে তাকে জান্নাত দান করেন-সেই দোয়া করি।
শহীদ সাকিবের বাবা মাইনুল হক বাসসকে বলেন, আমার ছেলের খুনিদের দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি করছি। যাতে তারা আর কোনো মায়ের বুক খালি করার সাহস না পায়।