পাইলট হয়ে অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্ন দেখতেন শহীদ সিয়াম

বাসস
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:১৪ আপডেট: : ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০
শহীদ সিয়াম -ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : আজাদ রুহুল আমিন

বাগেরহাট, ১১ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : মা চাইতন ছেলেকে ডাক্তার বানাতে, আর ছেলে স্বপ্ন দেখত পাইলট হয়ে অ্যাডভেঞ্চারের, বিশ্ব ঘুরে দেখার। কিন্তু ফ্যাসিবাদী হাসিনার খুনি বাহিনীর প্রাণঘাতী গুলিতে শহীদ হয়ে অকালে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন সেই স্বপ্নবাজ তরুণ আলিফ আহমেদ সিয়াম।

আলিফ আহমেদ সিয়াম (১৫) ছিলেন ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তুখোড় মেধাবী ও সাহসী সিয়াম নিয়মিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিতেন, সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের চূড়ান্ত দিন ৫ই আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় বাসা থেকে বের হয়ে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেন সিয়াম। এ সময় সাভার থানার বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজের নিচে আনুমানিক দুপুর ২:৩০টার দিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিটি মাথার নিচে দুই ভ্রুর মাঝখান দিয়ে ঢুকে পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়।

দুপুর ৩:৩০টার দিকে খবর পেয়ে মা তানিয়া আক্তার সিয়ামকে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করান। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাকে।আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ই আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় শাহাদাত বরণ করেন সিয়াম।

ইসলাম নগর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানাজা শেষে, শহীদ সিয়ামের লাশ ৮ আগস্ট ভোর ৫টায় বাগেরহাটের বাঁশবাড়ীয়া গ্রামে পৌঁছে এবং পারিবারিক কবস্থানে দাফন করা হয়।

শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের মা তানিয়া আক্তার পেশায় শিক্ষিক। তিনি ছেলেকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা পোষণ করতেন। তবে আলিফ তার মাকে বলতেন, তিনি পাইলট হবেন, এডভেঞ্চার করবেন, এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে পবিত্র হজব্রত পালন করবেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার মাকে দিয়ে মেধাবী ছাত্র সিয়ামকে আন্দোলনে না যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এতে দমে না গিয়ে সিয়াম তার মাকে বলেছিলেন, ‘হয় বীরের মতো বাঁচব, নইলে বীরের মতো মরব।’

সিয়ামের মা তানিয়া আক্তার বাসস প্রতিনিধিকে কেঁদে কেঁদে বলেন, 'আমি স্বামীর বদলে আমার ছেলের নামে পরিচিত হতে চেয়েছিলাম। এখন সবাই আমাকে শহীদ আলিফের মা হিসেবেই চেনে।’

আলিফ ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেলে আক্রান্ত হন। কিন্তু আন্দোলন থেকে পিছ পা হননি। সিয়াম ক্লাস ওয়ানে ও ক্লাস সিক্সে জাহাঙ্গীর নগর স্কুল কলেজ এন্ড ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়ে কোটার কারণে ভর্তি হতে পারেননি। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনে শেষ দিন পর্যন্ত রাজপথে ছিলেন তিনি।

আলিফ আহমেদ সিয়াম বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়া কাশিমপুর এলাকার ব্যবসায়ী মো. বুলবুল কবীর ও শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের একমাত্র ছেলে। সিয়ামের একটাই বোন, ইসরাত জাহান লামহা (১২), বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সাহায্য হিসেবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ৫ লাখ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২ লাখ এবং ঢাকার স্থানীয় বিএনপি ১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।

শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা ব্যবসায়ী বুলবুল কবীর বলেন, ‘আমার সন্তান দেশের স্বৈরাচারী শাসনের পতন তরান্বিত করতে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে।’ তিনি শহীদ আলিফের নামে বাগেরহাটের কোনো স্কুল, কলেজ অথবা হাসপাতালের নামকরণের দাবি জানান।

শহীদ আলিফের বাবা আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনার নির্দেশে বিডিআর হত্যা, হেফাজতে ইসলাম হত্যা, এবং ২ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তার বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া দরকার।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যুক্তরাষ্ট্রে ফায়ারিং স্কোয়াডে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে হাইব্রীড ধান বীজ উৎপাদন শুরু
নিম্ন আদালত মনিটরিংয়ে হাইকোর্টের ১৩ বিচারপতি
জনগণ বিচার বিভাগের ওপর হারানো আস্থা ফিরে পাবে: প্রধান বিচারপতি
নদীতে ফুল উৎসর্গে মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’
ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্রে এক ব্যক্তি অভিযুক্ত: মার্কিন বিচার বিভাগ
ইসরাইলি হামলায় গাজায় একই পরিবারের ১০ জন নিহত
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মিনি চিড়িয়াখানা থেকে ১৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার
দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে
ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত
১০