প্রতিবেদন: আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ১৪ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : স্বৈরাচার পতনের আনন্দ মিছিলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হবে, এমনটি কেউ কল্পনাও করেনি। বিজয়ের মিছিলেও যে হায়েনার দল নির্বিচারে গুলি চালাবে, তা ছিল সকলের ধারণার বাইরে।
বিজয়োল্লাসের আনন্দঘন মুহূর্ত নিমেষেই বিষাদের বিষ ছড়িয়ে দিল ওরা। নির্মম বুলেট নিভিয়ে দিল টগবগে যুবক জাকিরের জীবনপ্রদীপ।
আনন্দ মিছিলে গিয়ে মৃত্যু
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার আদাবর এলাকায় আনন্দ মিছিলে যান ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইউনুস মালের ছেলে মো. জাকির হোসেন (২৬)।
ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে আদাবর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে সঙ্গে থাকা বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
থামছে না মা-বাবার শোকের মাতম
মৃত্যুর ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ছেলের কথা ভুলতে পারছেন না তার বাবা-মা। সংসারের অন্যতম উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা মো. ইউনুস ও মা ইয়ানুর বেগম। কিছুতেই থামছে না তাদের শোকের মাতম। শহীদ জাকির হোসেন ঢাকার আদাবর ১০ নম্বর সড়ক এলাকায় একটি থ্রিপিস কারখানায় অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ করতেন।
অভাবের কারণে জাকির হোসেন পঞ্চম শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় প্রায় ২০ বছর আগে তারা ঢাকা পাড়ি জমান। বাবা ইউনুস দিনমজুরের কাজ করতেন, আর মা ইয়ানুর বেগম মানুষের বাসায় কাজ করতেন। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন তারা।
পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে লড়াই
দুই ভাই মিলে যা আয় করতেন, তা দিয়ে নিজেদের সংসারের খরচের পাশাপাশি বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য টাকা পাঠাতেন। জাকির ও জাহিদের উপার্জনই ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন।
গত ৩ আগস্ট সকালে মায়ের জন্য বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠান জাকির। সেদিন তিনি মাকে বলেছিলেন, ‘মা, এক হাজার টাকা পাঠাইছি। ২০ তারিখে আবার টাকা পাঠাবো। ক’দিন এইটা দিয়ে চলো।’ এটিই ছিল মায়ের সঙ্গে তার শেষ কথা।
বিচার দেখে যেতে চান মা
মা ইয়ানুর বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘বাবা বলছিল ২০ তারিখ টাকা পাঠাবে। কিন্তু ২০ তারিখের আগেই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। এখন আমাদের কী হবে?’ ছেলের শোকে অসুস্থ বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
তিনি সরকারের কাছে ছেলে হত্যার বিচার ও সংসারের জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি জানান। ক্ষুব্ধ মা বলেন, ‘আমার বুকের মানিককে যে হাসিনার হানাদার বাহিনী হত্যা করেছে, আমি জীবিত থাকতে সেই জালেমদের বিচার দেখে যেতে চাই।’
সরকারি সহায়তার আশ্বাস
ইয়ানুর বেগম জানান, ছেলের মৃত্যুর পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুদান পাননি।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসসকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে নির্মমতার শিকার প্রতিটি পরিবারকে সরকার যথাযথভাবে মূল্যায়নের কার্যক্রম চালাচ্ছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের কাছে সরকারের অনুদান পৌঁছানো হবে।’