ঢাকা থেকে মেয়ের জন্য বোরকা আনার কথা ছিল শহীদ আজমত আলীর

বাসস
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ২০:৩৫
শহীদ আজমত আলী : ছবি- বাসস

প্রতিবেদন : মোহাম্মদ নুর উদ্দিন

হবিগঞ্জ, ১১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মৃত্যুর একদিন পূর্বৈ এক মাত্র কন্যার জন্য ঢাকা থেকে বোরকা নিয়ে আসার কথা ছিল শহীদ আজমত আলী। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের বুলেটে প্রাণ হারান দরিদ্র মাছ ব্যবসায়ী আজমত আলী। 

শহীদ আজমত আলীর বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার হরিপুর গ্রামে। তিনি ফজর আলীর ছেলে। তার বয়স ছিল প্রায় ৩৫ বছর। শহীদ আজমত আলীর বাবা ফজর আলী ও মা ছবিনা বিবি প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। স্ত্রী রবিরুন বেগম গৃহিণী।  

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এর সাথে আলাপকালে শহীদ আজমত আলীর স্ত্রী জানান, আজমত আলী শহীদ হওয়ায় তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে তিনি অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন। 

শহীদ আজমত আলীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ১৭ বছর বয়সী বড় ছেলে মাহফুজ অভাব-অনটনে লেখাপড়া ছেড়ে এখন কাজের সন্ধানে ঘুরছেন। ছোট ছেলে মাহিনের বয়স ১০ বছর। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। আর একমাত্র মেয়ে নাদিরা স্থানীয় ম্যাপ হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। 

স্থানীয়রা জানান, শহীদ আজমত আলী বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। জীবিকার তাগিদে প্রায় ১৫ বছর ধরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাছের আড়তে কাজ করে আসছিলেন।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই ঢাকায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মাছের আড়ত থেকেই ছুটে যেতেন আন্দোলনে। গত ৫ আগস্ট দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকালে আন্দোলনের সময়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে গলায় গুলিবিদ্ধ হন আজমত আলী। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঢাকায় গিয়ে লাশ সনাক্ত করে গ্রামে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।

শহীদ আজমত আলীর স্ত্রী রবিরুন বেগম বাসসকে জানান, তার স্বামী শহীদ হওয়ার পর জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১০ লাখ, জামায়াতের পক্ষ থেকে ২ লাখ ও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। মূলত অনুদানের টাকা দিয়েই তার সংসার চলছে।

তিনি বলেন, আমার তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে বড় ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন একটা চাকরির জন্য ঘুরছে।  

রবিরুন জানান, ৪ আগস্ট রাতে বিভিন্ন বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু একথাই শেষ কথা হবে কে জানত! পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে রবিরুনের পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

বিচার প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্বামী হত্যার এখনও মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে শিগিগির মামলা দায়ের করা হবে এবং প্রকৃত দোষীদের সঠিক বিচার হলে তিনি ও তার পরিবার শান্তি পাবেন বলে জানান। 

শহীদ আজমত আলীর কন্যা নাদিরা জানান, তার বাবার সাথে শেষ কথা ছিল তিনি তার মেয়ের জন্য ঢাকা থেকে বোরকা নিয়ে বাড়িতে আসবেন। কিন্তু বাবা আর বোরকা নিয়ে আসলেন না, আসলেন লাশ হয়ে। 

নাদিরা জানায়, তার বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে তার বাবার আত্মার শান্তি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ইলিশ সংরক্ষণে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম
গুণগতমান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্নের নির্দেশ সেতু সচিবের
নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের অভিযান
শ্রমিক জাগরণের লক্ষ্যে ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে শিমুল বিশ্বাসের আহবান
ডিএমপিতে সেপ্টেম্বর মাসে সংক্ষিপ্ত বিচারে ২৫৭টি মামলা নিষ্পত্তি
দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও তুরস্ক আলোচনা
শিক্ষার্থী হত্যা : সাবেক ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছসহ পাঁচজন রিমান্ডে
লড়াই করে হারল বাংলাদেশ
ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি পদে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার অভিনন্দন 
গ্রিস উপকূলে নৌকাডুবিতে ৪ অভিবাসী নিহত
১০