ভারতই পারে নিমিশাকে বাঁচাতে 

বাসস
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫২ আপডেট: : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৪

ঢাকা, ১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ইয়েমেনের একটি আদালত ভারতীয় এক নার্সকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার (৩৬) মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদন করেছেন প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি। আগামী এক মাসের মধ্যে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন আদালত। ইয়েমেনের সরকারি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবরে ভারতে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কেন এবং কী অপরাধে প্রিয়াকে এই সাজা দেওয়া হচ্ছে ভারত সরকার এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। তবে গণমাধ্যমে খবর পাওয়ার সাথে সাথে ভারত সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিক্রিয়ায় জানতে চেয়েছে কেন এবং কী অপরাধে প্রিয়াকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে ইয়েমেন সরকার। 

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে আজ এই খবর জানিয়েছে।

ভারতের কেরালা রাজ্যের পালাক্কড জেলার বাসিন্দা নিমিশা পেশায় একজন নার্স। তার স্বামী টমি থমাস এবং একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ইয়েমেনে বসবাস করছেন তিনি। প্রিয়া ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন।

ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সালে তার স্বামী ও ১১ বছর বয়সী একমাত্র কন্যা ভারতে ফিরে গেলেও প্রিয়া সেখানেই থেকে যান। কিন্তু তার স্বামী ও কন্যা আর ইয়েমেনে ফিরতে পারেননি। কারণ যুদ্ধের জন্য তাদের আর ভিসা দেয়নি ইয়েমেন সরকার।

নিমিশার স্বপ্ন ছিল একটা ক্লিনিক চালু করার। ২০১৪ সালেই তালাল আব্দো মাহাদি নামের এক ইয়েমেনি নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মাহাদি তাকে ক্লিনিক খোলার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কারণ, সেই দেশের আইন অনুযায়ী যে কোনো ধরনের ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদারের দরকার।

পরিকল্পনা মতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক চালু করেন। কিন্তু কিছুদিন পরই দুই অংশীদারের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ঘুমের ইঞ্জেকশন পুশ করে মাহাদিকে হত্যা করেন নিমিশা প্রিয়া। পরে এক সহকর্মীর সহযোগিতায় লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দেন।

এই ঘটনার পর ঐ মাসেই ইয়েমেন থেকে পালানোর চেষ্টা করেন নিমিশা। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ার থেকে ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি নিমিশা। মাহাদিকে হত্যার দায়ে ২০১৮ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের একটি আদালত। তাকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।

এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন নিমিশা। আদালতে তিনি বক্তব্যে বলেন, মাহাদি তার ওপর অমানবিক অত্যাচার চালাতেন। তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আত্মরক্ষার্থে মাহাদিকে হত্যা করেন তিনি। কিন্তু ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট তার আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

এই পরিস্থিতিতে নিমিশার প্রাণ বাঁচানোর একমাত্র উপায় ‘ব্লাড মানি’।

ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অর্থের বা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে হত্যাকারীকে প্রাণ ভিক্ষা দিতে পারেন। এখন সেই চেষ্টাই শুরু করেছে নিমিশার পরিবার।

আসল সমস্যা হলো ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুর হওয়ার পর থেকে ভারত সেই দেশ থেকে কূটনৈতিক মিশন প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে দেশটিতে বর্তমানে ভারতের কোনো প্রতিনিধি নেই। এমনকি ভারতীয়দের ইয়েমেনে যেতেও দেওয়া হয় না। 

মেয়ের জীবন বাঁচাতে নিমিশার মা ইয়েমেনে যাওয়ার জন্য ভারতের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তাকে ইয়েমেন পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, নিমিশা ও তার পরিবারকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজনে ভারত সরকার ইয়েমেন সরকারের সঙ্গেও কথা বলবে। 

জয়সওয়াল আরো বলেছেন, ‘গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার ওয়াকিবহাল। নিমিশার পরিবারও সব রকম চেষ্টা করেছে। সরকার যথাসাধ্য সাহায্য করছে।’

সহযোগিতার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে নিমিশার পরিবারকে প্রায় ২০ হাজার ডলার দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঐ টাকা দিয়ে নিমিশার জন্য আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে। সেই আইনজীবী আরো ২০ হাজার ডলার চেয়েছেন মাহাদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের আয়োজন করতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার
জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে : এডভোকেট জুবায়ের
চট্টগ্রামকে হারিয়ে ফাইনালে রংপুর
২০২৫ শান্তিতে নোবেলজয়ী ভেনেজুয়েলার মারিয়া করিনা মাচাদোকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে ইতিহাসের সেরা : শফিকুল আলম
সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মৃত্যুতে ঢাবি সাদা দলের শোক
নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় হার বাংলাদেশের
হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন : এ্যানি
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল অবস্থা অবসানের দাবি আরিফুল হক চৌধুরীর
বিএনপি কোনো অবস্থাতেই পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে বিশ্বাসী নয় : ডা. জাহিদ হোসেন
১০