ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলি সেনাবাহিনী শনিবার জানিয়েছে, তারা গাজায় নতুন আক্রমণের অংশ হিসেবে ‘ব্যাপক হামলা’ শুরু করেছে। সেনাবাহিনী টেলিগ্রামে জানিয়েছে, তারা অভিযানের ‘প্রাথমিক পর্যায়’ শুরু করেছে, যা ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ’ নামে পরিচিত। আরবি ভাষায় একটি পোস্টে বলা হয়েছে,‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের সম্প্রসারণের লক্ষ্য ছিল এই অভিযা।’ যার লক্ষ্য ছিল অপহৃতদের মুক্তি এবং হামাসের পরাজয়সহ যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জন করা। ইংরেজিতে একটি পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী ‘গাজা উপত্যকার এলাকায় অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য সৈন্যদের একত্রিত করছে।’
জেরুজালেম থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
এদিকে উদ্ধারকারীরা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ১শ’ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১শ’ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ২৪ ঘন্টায় ‘গাজা উপত্যকা জুড়ে ১৫০ টিরও বেশি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ফলে হামাসের বিরুদ্ধে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ১৮ মার্চ গাজায় ইসরাইল আবার সামরিক হামলা শুরু করে।
সর্বশেষ অভিযানটি এমন এক সময় শুরু হয় যখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার ওপর থেকে ব্যাপক সাহায্য অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ, এনজিওগুলো খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি এবং ওষুধের তীব্র সঙ্কটের বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে।
১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধে ফিরে আসা আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার মুখে পড়েছে ইসরাইল। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান নতুন করে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং যাকে তিনি জনসংখ্যাকে স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন।
- ‘জাতিগত নির্মূল’ -
ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বোমার এই সর্বশেষ হামলা এবং মানবিক সহায়তার অস্বীকৃতি ইঙ্গিত দেয় যে, গাজায় স্থায়ীভাবে জনসংখ্যার বাস্তুচ্যুতির চাপ রয়েছে যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিগত নির্মূলের সমতুল্য।’
জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান ইসরাইলি প্রচারণা দলটি বলেছে, লড়াই জোরদার করে নেতানিয়াহু কূটনীতির মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনদের বের করে আনার একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ হাতছাড়া করছেন।
শুক্রবার হামাস দাবি করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের উপর চাপ সৃষ্টি করুক যাতে তারা তাদের মুক্তিপ্রাপ্ত মার্কিন-ইসরাইলি জিম্মির বিনিময়ে সাহায্য অবরোধ তুলে নেয়।
মার্কিন নাগরিকত্বপ্রাপ্ত শেষ জীবিত জিম্মি এডান আলেকজান্ডারকে গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সরাসরি আলোচনার পর মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে ইসরাইল একপাশে চলে যায়।
আলেকজান্ডারের মুক্তির বিষয়ে ওয়াশিংটনের সাথে সমঝোতার অংশ হিসেবে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু বলেন, গ্রুপটি ‘ক্রসিং খুলে দেওয়ার এবং মানবিক সাহায্যের তাৎক্ষণিক প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য’ ইসরাইলের ওপর ‘আরো চাপ প্রয়োগের অপেক্ষায় আছে।’
ইসরাইল বলেছে, গাজায় সাহায্য বন্ধ করার সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল হামাসের কাছ থেকে ছাড় আদায় করা, যারা এখনও ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালের হামলার সময় আটক কয়েক ডজন ইসরায়েলি জিম্মিকে করে রেখেছে।
- ‘মানুষ অনাহারে আছে’ -
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার স্বীকার করেছেন, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘অনেক মানুষ অনাহারে আছে।’
ট্রাম্প আবুধাবিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা গাজার দিকে নজর রাখছি। আমরা এর যত্ন নেব’।
আরব লীগ শনিবার বাগদাদে আঞ্চলিক সংকট নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হবে, যেখানে গাজাকে এজেন্ডায় শীর্ষে রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ - যিনি গাজায় ইসরাইলের আক্রমণের তীব্র সমালোচনা করেছে। তিনি সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপি’র হিসাব অনুসারে, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে হামাসের হামলায় ইসরাইলি পক্ষের ১,২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
হামলার সময় ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৫৭ জন গাজায় রয়ে গেছেন, যার মধ্যে সেনাবাহিনী বলেছে ৩৪ জন মারা গেছেন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলের হামলা পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে ২,৯৮৫ জন নিহত হয়েছে, যার ফলে যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা ৫৩,১১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।