ফ্রান্সে সামুদ্রিক পার্কে ওরকার ভিডিও ঘিরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ

বাসস
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১৯:৩০

ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫ (বাসস): ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সামুদ্রিক পার্কে শৈবাল-ভরা পুলে দুটি ওরকার (কিলার হোয়েল) ঘোরাঘুরির দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ায় মা-সন্তান উইকি (২৪) ও কেজিও (১১)-কে নিয়ে বিশ্বব্যাপী আবারও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ফ্রান্সের নিস থেকে এএফপি জানায়, ২০২১ সালে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দিয়ে শো নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস হওয়ার পর ফরাসি রিভিয়েরার পার্ক মারিনল্যান্ড বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দর্শনার্থীদের জন্য দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় পার্কটির, যা ১৯৭০ সালে আন্তিব শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

মা-সন্তান ওরকা এবং পার্কের আরও ১২টি ডলফিনকে স্পেনের দুটি পার্কে স্থানান্তরের জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারিতে জরুরি আবেদন করলেও স্পেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই পার্কগুলো এই প্রাণীদের জন্য উপযোগী নয়।

কানাডাভিত্তিক এনজিও টাইডব্রেকার্স ভিডিওটি প্রকাশ করে এক পোস্টে জানায়, ‘মারিনল্যান্ড আন্তিবেসের পরিস্থিতি জরুরি। বন্ধ হয়ে যাওয়া এক পরিত্যক্ত ট্যাংকে ওদের আটকে রাখা অগ্রহণযোগ্য।’ তাদের মতে, যদি ওরকাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে ‘তাদের হয়তো হত্যার সিদ্ধান্ত নিতে হবে বা তারা পরিবেশের অবনতির কারণে ধীরে ধীরে মারা যাবে।’

ভিডিওটি ড্রোনের মাধ্যমে এ মাসের শুরুর দিকে ধারণ করা হয়। এতে দেখা যায়, শৈবাল-ভরা পানির ট্যাংকে ওরকা ও ডলফিন ঘুরে বেড়াচ্ছে, পাশেই পরিত্যক্ত সামুদ্রিক স্থাপনাসমূহ দেখা যাচ্ছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ এএফপিকে জানায়, ওরকা ও ডলফিনের পুলগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রাণীদের দেখভালে এখনও প্রায় ৫০ জন কর্মী নিযুক্ত আছেন। শৈবাল নিয়ে তারা ব্যাখ্যা দেয়, বসন্তকালে যখন পানির তাপমাত্রা বাড়ে, তখন সমুদ্রের পরিশোধিত পানিতে থাকা শৈবালের বিউজ গজিয়ে ওঠে, এটি স্বাভাবিক ও ক্ষতিকর নয়। নিয়মিত ব্রাশিং করে সেগুলো সরানো হয়।

পার্কের সাবেক ব্যবস্থাপক মাইক রিডেল, যিনি ২৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন, এই ব্যাখার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ২০২০ সালের মে মাসে এএফপির তোলা ছবিতেও একই ধরনের শৈবাল দেখা গেছে।

তবে টাইডব্রেকার্সের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে—পার্কের দাবি, তাদের কর্মীদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশমন্ত্রী আনিয়েস পনিয়ে-রুনাশে’র দপ্তর এএফপিকে জানায়, প্রাণীরা যতক্ষণ পর্যন্ত না চূড়ান্ত গন্তব্যে যায়, ততক্ষণ তাদের যেন ভালোভাবে রাখা হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে ‘বিকল্প সমাধান’ খোঁজা হচ্ছে।

স্পেনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের পর পার্কটি ওরকাগুলোকে জাপানে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু ফরাসি সরকার ইউরোপের কোনো উন্নত কল্যাণমূলক মানসম্পন্ন পার্কে পাঠানোর দাবি জানিয়ে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে। তবে ইউরোপের একমাত্র সম্ভাব্য পার্ক—স্পেনের টেনেরিফে অবস্থিত—সেখানেও স্পেনীয় সরকার অনুমতি দেয়নি। তাদের মতে, সেই পার্কের অবকাঠামো যথাযথ নয়।

ওয়ান ভয়েস ও সি শেফার্ডসহ একাধিক এনজিও ওরকাগুলোর অবস্থা যাচাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ পাঠাতে চেয়েছে।

বন্দিদশায় জন্ম নেওয়া উইকি ও কেজিও বন্য পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারবে না। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য আধা-প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি সামুদ্রিক অভয়ারণ্য তৈরির পক্ষে একমত ফরাসি সরকার ও এনজিওগুলো।

সাবেক ব্যবস্থাপক রিডেলের মতে, এর বার্ষিক ব্যয় হতে পারে ২২ থেকে ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার (২ থেকে ৩ মিলিয়ন ইউরো)। উপযুক্ত পরিবেশে থাকলে উইকি ও কেজিওর আরও বহু দশক বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চট্টগ্রামের সাবেক কাউন্সিলর যুবলীগ ক্যাডার তৌফিক গ্রেফতার
রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি
আর্থিক দুর্নীতি, গঠনতন্ত্র ও বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগের বিসিবিতে দুদকের অভিযান
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন
মতিঝিলে ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে 
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ বাড়াতে দূতাবাসের উদ্যোগ
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ১
ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান
সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে মোমবাতি প্রজ্বলন
খুলনায় জলবায়ু নীতিতে উপকূলীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবি
১০