ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরের সেন্ট জ্যাকবসহলে লেজার লাইটের ঝলকে ২৬টি দেশের শিল্পীরা শনিবার রাতে মঞ্চ কাঁপাতে প্রস্তুত, যেখানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরাসরি সম্প্রচারিত সংগীত প্রতিযোগিতা,ইউরোভিশন সং কনটেস্টের ৬৯তম আসরের ফাইনাল।
সুইজারল্যান্ডের বাসেল থেকে এএফপি জানায়, ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১৬ কোটি দর্শক এ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি দেখবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে নজরকাড়া সাজসজ্জা, নাটকীয়তা, আতশবাজি আর অভিনয়প্রবণ উপস্থাপনা থাকে মূল কেন্দ্রে।
এবারের আসরে সুইডেনের কমেডি ট্রিও কেএএইচ (কঅঔ)-এর ‘বারা বাদা বাস্তু’, সোনা বা ঘামঝরানো সৌন্দর্যের গানে, জয়ের ক্ষেত্রে বাজির শীর্ষে আছে। তবে দুইটি সেমিফাইনালের পর অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ইসরাইলও শক্তিশালী পারফরম্যান্সের সুবাদে চমক দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও ইস্টোনিয়া, আলবেনিয়া এবং আয়োজক সুইজারল্যান্ড ‘আউটসাইড’ হলেও দর্শকদের ভোটে চমক দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমনকি কানাডীয় তারকা সেলিন ডিওন, যিনি ১৯৮৮ সালে সুইজারল্যান্ডের হয়ে ইউরোভিশনে জয়ী হয়েছিলেন—তিনি আবেগঘন প্রত্যাবর্তন করতে পারেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে জল্পনা। যদিও তিনি ‘স্টিফ পার্সন সিনড্রোম’ নামক একটি ব্যথাদায়ক অটোইমিউন রোগে ভুগছেন।
উৎসবমুখর পরিবেশ: অ্যাড্রেনালিন, কবিতা, বুমিং বিটস
শো’য়ের জন্য ৬ হাজার ৫০০টি বহুল কাঙ্ক্ষিত টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। ইউরোভিশনের পরিচালক মার্টিন গ্রিন জানান, ‘স্টাফরা ক্লান্ত, কিন্তু খুশি। শিল্পীদের পারফরম্যান্স দেখতে দেখতে যে অ্যাড্রেনালিনের ধাক্কা পাই, তা আমাদের উজ্জীবিত করে তোলে।’
চূড়ান্ত পর্বে যেসব গান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তা ইউরোপীয় সংগীতের বৈচিত্র্যের প্রতিচ্ছবি। এর মধ্যে আছে: পর্তুগিজ গিটার বলাড, মাল্টার ডিভা গান, লিথুয়ানিয়ার বিকল্প রক, অস্ট্রিয়ার অপেরার ধাঁচের গান, ইতালির গলা মেলানো রোমান্টিক সুর, গ্রিসের পাওয়ার বলাড, লাটভিয়ার নৈর্সগিক গীতধারা, জার্মানির বেজিং বিটস।
ফ্রান্সের ২০মিনিত পত্রিকার সংগীত সাংবাদিক ফাবিয়ান রাঁদানে বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকাটা বেশ বৈচিত্র্যময়, কখনও জোরালো, কখনও কাব্যিক। তবে দর্শকদের হৃদয় কে জিতবে, বলা সত্যিই কঠিন।’
জ্বলে উঠবে মঞ্চ : আগুন আর কফির গন্ধে
শো শুরু করবেন নরওয়ের কাইল আলেসান্দ্রো, আগুনের ঝলকে। এরপর আসবেন লুক্সেমবার্গের লরা থর্ন, এলইডি ‘লস হাউস’ নিয়ে। তার পরে ইস্টোনিয়ার টমি ক্যাশ, যিনি অদ্ভুত ভঙ্গিতে ‘এসপ্রেসো ম্যাকিয়াতো’ নামক এক মজার ইতালীয় গান গাইবেন।
চূড়ান্ত তিন পারফরমার, ফ্রান্স, সান মারিনো ও আলবেনিয়া। শো শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ০১টায়। পারফরম্যান্স চলবে দুই ঘণ্টা, এরপর শুরু হবে ফলাফলের উত্তেজনাময় ঘোষণা।
৩৭টি দেশের জুরি ও দর্শকদের সমান ভোটে নির্ধারিত হবে বিজয়ী। এছাড়া ‘বিশ্বের বাকি অংশ’ থেকেও একটি সম্মিলিত ভোট যোগ হবে।
শুক্রবারের ‘ড্রেস রিহার্সালে’ ভিত্তি করে জুরিদের ভোট ইতোমধ্যেই জমা পড়েছে।
ভোটপ্রধান টমাস নিডারমায়ার বলেন, ‘সেমিফাইনালের ফলাফলগুলো খুবই কাছাকাছি ছিল, এটা ছিল সত্যিকার অর্থে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা।’
রাজনীতি ও প্রতিবাদ : চাপে ইসরাইল
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের অংশগ্রহণকে ঘিরে বাসেলে ছোট পরিসরের প্রতিবাদ হয়েছে। ইসরাইলি প্রতিযোগী ইউভাল রাফায়েল, যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন, গাইছেন ‘নিউ ডে উইল রাইজ’।
প্রতিযোগিতা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে বাসেলে একটি ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
উত্তাপ বাড়াচ্ছে ফিনল্যান্ড, আশায় ইউক্রেন
ফিনল্যান্ডের এরিকা ভিকম্যান, চামড়ার পোশাকে ‘ইচ কোম্মে’ নামক লাস্যময় গানে দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছেন। গান শেষে তাকে তুলে ধরা হয় আগুনঝরা সোনালি মাইক্রোফোনে।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন দর্শকদের সামনে থাকি, তখন গভীর ভালোবাসা পাই, আর তা আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে চাই।’
ইউক্রেন, যাঁরা ২০২২ সালে ইউরোভিশন জিতেছিল, এবার জিফারব্লাট নামক ব্যান্ডের মাধ্যমে আবারও ট্রফি জয়ের আশায়।
তাদের গিটারিস্ট বলেন, ‘আমরা আমাদের আবেগ দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই, এটাই টিভির পর্দা পেরিয়ে পৌঁছাবে।’
বিজয়ী দেশ আগামী বছর ইউরোভিশনের আয়োজক হওয়ার গৌরব পাবে।