ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপপন্থী ওয়ারশ শহরের মেয়র রাফাল ট্রাজকোস্কি পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তবে ডানপন্থী ও কট্টর-ডানপন্থী প্রার্থীরা সম্মিলিতভাবে বেশি ভোট পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় তার সামনে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
ওয়ারশ থেকে এএফপি জানায়, ক্ষমতাসীন মধ্যপন্থী জোটের সমর্থনপুষ্ট ট্রাজকোস্কি ১ জুন অনুষ্ঠেয় রান-অফ ভোটে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদ কারোল নাভরোকির মুখোমুখি হবেন।
ট্রাজকোস্কির জয় হলে তা ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থী সরকারের জন্য বড় সমর্থন হবে। টাস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান। অন্যদিকে, নাভরোকির বিজয় রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে দীর্ঘায়িত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দেশে নতুন সংসদ নির্বাচন দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম দফায় ট্রাজকোস্কি পেয়েছেন ৩১.৩৬ শতাংশ ভোট, আর নাভরোকি পেয়েছেন ২৯.৫৪ শতাংশ। ভোটের ব্যবধান অতি সামান্য হওয়ায় দ্বিতীয় দফার প্রচারণা হবে তীব্র ও বিভাজনমূলক—বিশেষ করে তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীদের ভোটারদের দলে টানাই হবে মূল লক্ষ্য।
কট্টর-ডানপন্থী দুই প্রার্থী সম্মিলিতভাবে ২১.১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিয়োত্র বুরাস বলেন, 'এটা নাভরোকির জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ তার কাছে তুলনামূলক বড় ভোটভাণ্ডার তৈরি হয়েছে।'
নাভরোকি যদি কট্টর-ডানপন্থীদের ভোট নিজেদের দিকে টানতে পারেন, তবে দ্বিতীয় দফায় তার জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনসের ওয়ারশ কার্যালয়ের প্রধান বলেন, 'পরবর্তী দুই সপ্তাহের প্রচারণা হবে খুবই মেরুকরণমূলক ও নির্মম—একটি ইউরোপপন্থী, উদারনৈতিক ও প্রগতিশীল পোল্যান্ড বনাম একটি জাতীয়তাবাদী, ট্রাম্পীয় ও রক্ষণশীল পোল্যান্ডের মুখোমুখি সংঘাত।'
উল্লেখ্য, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, বিদেশনীতি পরিচালনাকারী এবং আইন প্রণয়ন বা বাতিল করার ক্ষমতার অধিকারী।
প্রার্থীদের অবস্থান গর্ভপাত ও এলজিবিটিকিউ অধিকার প্রশ্নে বিপরীতমুখী। নির্বাচনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠছে।
‘ডিগ্লোবালাইজেশনের’ ছায়া
ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৭ শতাংশের বেশি, যা পোল্যান্ডে তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও ২০২৩ সালের রেকর্ড সংখ্যক ভোটারের চেয়ে কম। ওয়ারশের ভোটার ৪৭ বছর বয়সী ব্যাংকার ইওনা লন বলেন, 'গতবারের নির্বাচনের পর আমাদের বিশাল প্রত্যাশা ছিল, যা কিছুটা হতাশায় রূপ নিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এটি সরকারের জন্য একটি বার্তা—মানুষ তাদের ধৈর্য হারাচ্ছে।'
ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট আন্দজেই দুদার ভেটোর কারণে বর্তমান সরকার গর্ভপাত আইন শিথিলসহ অনেক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই ট্রাজকোস্কির জয় হলে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে বলে মনে করছে শাসকজোট।
সোমবার প্রচারণার প্রথম দিনেই ভোটারদের মন জয় করতে উভয় প্রার্থী ছোটখাটো প্রচার কৌশল নিয়েছেন। ট্রাজকোস্কি মিষ্টি কেক বিতরণ করেন, আর নাভরোকি দেন ডোনাট।
নাভরোকি বলেন, তিনি 'উৎসাহ ও আশাবাদে পরিপূর্ণ' এবং কট্টর-ডানপন্থী প্রার্থী স্লাওমির মেনতজেনের সমর্থকদের আহ্বান জানান তাকে ভোট দেওয়ার জন্য। ভোটে তৃতীয় হওয়া মেনতজেন একজন ইউরোপবিরোধী মুক্তবাজারপন্থী এবং অভিবাসন ও গর্ভপাতের কঠোর বিরোধী। তিনি পোল্যান্ডে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয়কে দেশটির সম্পদ অপব্যবহারের অভিযোগেও অভিযুক্ত করেছেন।
অন্যদিকে, ট্রাজকোস্কি বলেন, 'আমি চেষ্টা করব অন্যভাবে ভোট দেওয়া সবার কাছে পৌঁছাতে, যেন তারা একটি স্বাভাবিক পোল্যান্ডের পক্ষে ভোট দেয়, র্যাডিকাল পোল্যান্ডের পক্ষে নয়।' তিনি তরুণদের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান।
২৪ বছর বয়সী ছাত্র কাসপার কারভাকি বলেন, পোল্যান্ডে কট্টর-ডানপন্থীদের উত্থান 'খুবই উদ্বেগজন' হলেও অনুমানযোগ্য। তিনি বলেন, 'জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন—সব জায়গাতেই একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সামাজিক সমস্যাগুলো থেকেই এদের উত্থান।'
গ্লোবসেক থিঙ্ক ট্যাংকের বিশ্লেষক মার্সিন জাবোরভস্কি বলেন, 'পোল্যান্ডও এই বৈশ্বিক প্রবণতার অংশ। এটা সম্ভবত এমন এক প্রজন্মের আগমনের ফলাফল, যারা গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।'
তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ডিগ্লোবালাইজেশন’ বা বৈশ্বিক সংযোগ ছিন্ন করার মতবাদের কারণে মানুষ এখন পরিচিত ও স্থানীয় জগতে ফিরে যেতে চাইছে।