নেত্রকোনা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫(বাসস) : জেলার খালিয়াজুড়ির ধনু নদে বরযাত্রীবাহী স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে পাঁচহাট গ্রামের দক্ষিণের বালুর চর এলাকায় দুইটি মৃতদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত দুইজন হলেন স্বপন মিয়ার সাত বছর বয়সের শিশুকন্যা লায়লা ও বর রানা মিয়ার বোন শিরিন (১৮)। পরে দুপুর দুইটার দিকে সামছু মিয়ার এগারো বছরের মেয়ে সামিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে উষামনি নামের পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই নিয়ে গত দুইদিনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিখোঁজ চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করেছে।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, গত দুইদিন ধরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা মরদেহ উদ্ধারে কাজ করছে। নিখোঁজ চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত মরদেহ গুলো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে।
এদিকে স্পিডবোট ডুবিতে বেঁচে ফেরা লোকজন অভিযোগ করেছেন, ধাক্কা লাগায় অন্য নৌকার লোকজন চালকের সঙ্গে ঝগড়া করে তাদের স্পিডবোটটি ডুবিয়ে দেয়। এতে উপজেলার আন্ধাইর গ্রামের মোফায়েল মিয়ার মেয়ে ঊষামণি (৫), একই গ্রামের স্বপন মিয়ার মেয়ে মোছা. লাইলা আক্তার (৭), সামছু মিয়ার মেয়ে সামিয়া (১১) ও নবাব মিয়ার মেয়ে মোছা শিরিন (১৮) পানিতে তলিয়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শুক্রবার আন্ধাইর গ্রামের নবাব মিয়ার ছেলে রানা মিয়ার বিয়ে উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা থেকে একটি স্পিডবোট ভাড়া করে আনা হয়। স্পিডবোটে চড়ে বরযাত্রীদের ইটনা উপজেলার মৃগা গ্রামে কনের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। বরযাত্রী রওনা হওয়ার আগমুহূর্তে বিয়েবাড়ির ১২ জন স্পিডবোটটি নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হাওরে ঘুরতে যান। এ সময় ধনু নদে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাল্কহেডকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় কাছে থাকা জেলেদের নৌকার সঙ্গে স্পিডবোটটির ধাক্কা লাগে। তখন নৌকার জেলেরা দ্রুত স্পিডবোটে উঠে এসে চালকের সঙ্গে ঝগড়া বাধায়। হুড়োহুড়ির একপর্যায়ে স্পিডবোটটি উল্টে যায়। এতে ওই চারজন নিখোঁজ এবং তিনজন আহত হন। বাকিরা সাঁতার কেটে রক্ষা পান।
ওই স্পিডবোটডুবিতে বেঁচে ফেরা আন্ধাইর গ্রামের ইয়াসমিন ও ময়না আক্তার বলেন, ‘আমাদের স্পিডবোটটি একটি নৌকার সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন ওই নৌকায় থাকা লোকজন তর্কাতর্কির পর স্পিডবোটে উঠে চালককে মারধর করে। একপর্যায়ে স্পিডবোটটি ডুবিয়ে দেয়। তখন সবাই সাঁতরে তীরে উঠলেও চারজন নদে ডুবে নিখোঁজ হয়। তারা ওই নৌকার লোকদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
খালিয়াজুরির ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এ কাদের বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত চারজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্পিডবোট ডুবিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন বেঁচে ফেরা লোকজন, সে বিষয়ে তদন্ত হবে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
খালিয়াজুড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মকবুল হোসেন জানান, স্পিডবোট ডুবে যাওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, নৌ পুলিশ লাশগুলোর সুরতহাল সম্পন্ন এবং ঘটনার তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।