পর্ন তারকাকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় সাজা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের

বাসস
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৬ আপডেট: : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫১

ঢাকা, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাজা হতে যাচ্ছে। তবে তাকে কারাদণ্ড বা অন্য সাজা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে শুক্রবার একজন বিচারক জানিয়েছেন।

যৌন সম্পর্কের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্টর্মিকে ঘুষ দেওয়া সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলাটিতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার চলছে।

বিচারক জুয়ান মার্চানের ওই বক্তব্যের অর্থ হলো, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র ১০ দিন আগে ট্রাম্পকে আদালতে হাজির হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ দৃশ্য বিরল। কেননা, এর আগে দেশটির সাবেক বা ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টই কখনও কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি।

তবে নিউইয়র্কের বিচারক জুয়ান মার্চান ট্রাম্পকে কারাদণ্ড বা জরিমানা না দিয়ে 'শর্তহীন মুক্তি' দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি তার আদেশে লিখেছেন যে, ট্রাম্প সশরীরে কিংবা ভার্চুয়ালি শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন।

বিচারক তার আদেশে বলেন, 'ট্রাম্পকে কারাদণ্ড দেওয়ার ইচ্ছা তার নেই। তাকে ‘শর্তহীন মুক্তির’ দণ্ডাদেশ (একধরনের স্থগিত দণ্ডাদেশ) দেওয়া হবে; যার অর্থ তাকে কোনো হেফাজতে থাকার, আর্থিক জরিমানা দেওয়ার কিংবা প্রবেশনের প্রয়োজন হবে না। এটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।’

এমন রায়ে ট্রাম্প আপিল করার সুযোগ পাবেন। বিচারক জানান, আপিলের বিষয়ে ট্রাম্প তার অভিপ্রায় স্পষ্ট করেছেন।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে এ মামলায় নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ক্ষতি করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে দেয়া একটি পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিচারকের ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, 'অবৈধ রাজনৈতিক হামলা' এবং ওই মামলাটিকে তিনি একটি 'সাজানো পরিহাস' বলে বর্ণনা করেছেন।

এদিকে এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং বলেন, ‘এ মামলায় ট্রাম্পের কোনো কারাদণ্ড হওয়া উচিত নয়। বেআইনি এ মামলা বিবেচনায় নেওয়ারই উপযুক্ত নয়। মামলাটি অবিলম্বে খারিজ করে দেওয়া—এটির সাংবিধানিক দাবি।’

স্টিভেন চিয়াং বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং উইচহান্টিংর মাধ্যমে তাকে বাধাগ্রস্ত করা উচিত হবে না।'

তিনি বলেন, 'কোনো দণ্ড হওয়া উচিত নয় এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার লড়াই অব্যাহত রাখবেন।'

এ মামলার বিরুদ্ধে তার শেষ আবেদনে ট্রাম্প বলেছিলেন যে, এটি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় তার মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে এবং দায়িত্ব পালনে তার সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

ট্রাম্পের বিবাদীপক্ষের কৌঁসুলিরা যুক্তি দিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মেয়াদে মামলাটি জিইয়ে রাখা হলে তা তার শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করবে।

তবে বিচারক এ যুক্তি নাকচ করে বলেন, জুরির রায় পাশ কাটালে তা আইনের শাসন অপরিমেয়ভাবে ক্ষুণ্ন করবে।

প্রসঙ্গত, মামলায় স্টর্মি ড্যানিয়েলস অভিযোগ করেছেন, ২০০৬ সালে নেভাডা অঙ্গরাজ্যে একটি হোটেলে ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়। সে ঘটনা যাতে তিনি কাউকে না বলেন, এ জন্য ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে এর ১০ বছর পর ২০১৬ সালে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দেন ট্রাম্প।

সে সময় ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ঘুষ দেওয়ার সেই তথ্য তিনি তার ব্যবসায়িক নথিতেও গোপন করেন।

অবশ্য ট্রাম্প স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, এ সবকিছু রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসন এসব কিছু করেছে।

ট্রাম্পই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু হয়। মামলায় গত বছরের মে মাসে ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারকেরা তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ ঘোষণা করার কথা ছিল গত বছরের ১১ জুলাই। কিন্তু কয়েক দফা তা পেছানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বিচারক মার্চান বলেন, ট্রাম্প গত আগস্টে তার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ নির্বাচনের পর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

বিচারক মার্চান বলেছেন ট্রাম্পের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ তিনি পেয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে তার হাতে যেসব বিকল্প আছে তার একটি হলো দণ্ডাদেশ বাস্তবায়ন ২০২৯ সালে তার হোয়াইট ছাড়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা কিংবা দণ্ড দিলেও তার সাথে জেলে থাকার বিষয়টি থাকবে না।

এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের আদেশে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য তিনি দায়মুক্ত থাকবেন বলে যে আদেশ দিয়েছিল, সেটিকে আদালতের সামনে যুক্তি হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করে সফল হননি। গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট ওই আদেশ দিয়েছিল।

গত মাসে ট্রাম্পের ঘুষের মামলা খারিজ চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছিল তা খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচারক মার্চান।

যুক্তরাষ্ট্রে নথি জালিয়াতির মামলায় চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু ন্যূনতম দণ্ড বা কারাবাস অবশ্য পালনীয় নয়। তাই, ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলে যাবেন না বলেই মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

এর কারণ হিসাবে তারা ব্যাখ্যা করেছেন ট্রাম্প একজন প্রবীণ ব্যক্তি এবং 'ফার্স্ট টাইম অফেন্ডার' অর্থাৎ প্রথমবার কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাই তাকে কারাগারে পাঠানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও তিনটি রাজ্যে অভিযোগ ও ফেডারেল ক্রিমিনাল মামলা আছে। এর একটি গোপনীয় নথি বিষয়ক এবং দুটি হলো ২০২০ সালের নির্বাচনি ফল সংক্রান্ত।

এর আগে গত ২৬শে নভেম্বর তার বিরুদ্ধে দণ্ড দেয়ার কথা ছিলো কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতায় বিচারক তা পিছিয়ে দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডিআর কঙ্গোতে নৌকায় আগুন, নিহত কমপক্ষে ১৪৩ জন
মেসি থেকে ট্রাম্প: এআই অ্যাকশন ফিগারের হিড়িক নেট দুনিয়ায়
একমাত্র মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ চান শহীদ জাকিরের স্ত্রী সালমা
শিশুর বামনত্ব : চ্যালেঞ্জ ও মোকাবিলার উপায়
শহীদ জাহাঙ্গীরের স্মৃতি বুকে নিয়ে দিন কাটে মেয়ে সিনথিয়ার
স্বপ্ন-সাধ তুচ্ছ করে দেশের জন্য জীবন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শহীদ শ্রাবণ
দিনাজপুরে ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের দেয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ
গাজীপুর সাফারী পার্ক থেকে বিপন্ন বন্যপ্রাণী লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেফতার 
সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে গেলে আলাদা বেতন কাঠামো প্রয়োজন : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে বিএনপির অভিনন্দন
১০