বিচার নিশ্চিত না হলে আবারও গুমের সংস্কৃতি ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে

বাসস
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ২১:০৫
ছবি : বাসস

খুলনা, ২৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : আজ এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে আবারও গুমের সংস্কৃতি ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

বক্তারা বলেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গুমের আলামত নষ্ট এবং সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি রয়েছে হুমকি ও নানা ধরনের অসহযোগিতাও। 

আজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার হলে ‘বলপূর্বক গুমের ঘটনা মোকাবেলা: কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়’ শীর্ষক এক সেমিনারের তারা এ কথা বলেন। 

গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার এবং গুম থেকে ফিরে আসা ভিকটিমসহ শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের সহযোগিতায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন ও ড. নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।

অধিকার’র পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন জাতিসংঘের ঢাকাস্থ মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন।

বক্তারা আরও বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, গুমের সঙ্গে জড়িত তৎকালীন বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে বিচার নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে।
তারা বলেন, তবে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই গুমের ঘটনাগুলো অনুসন্ধানের মাধ্যমে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার সব ধরণের তথ্যই সংগ্রহ করছে। যাতে করে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চারটি স্তরে সাধারণ মানুষকে গুম করা হতো। এগুলো হচ্ছে- একটি গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নজরদারির মধ্যে রাখত। অপর গ্রুপ তাকে তুলে নিতো। এই গ্রুপটি গুমের শিকার ব্যক্তিকে হয় জঙ্গি বানিয়ে সন্ত্রাস ও অস্ত্র মামলা দিয়ে আদালতে চালান দিতো, অথবা মেরে ফেলত। সর্বশেষ গ্রুপটি ভারতে পাচার করে দিত অথবা আয়না ঘরে গুম করে রাখতো।

তিনি বলেন, গুম কমিশন চারভাবে অনুসন্ধান করছে। এগুলো হচ্ছে- সব আয়না ঘর বা বন্দিশালা পরিদর্শন, সংশ্লিষ্টদের তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ, ভারতীয় কারাগারে বাংলাদেশীদের আটকের তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ এবং ভারতে পুশইনের তালিকা ধরে অনুসন্ধান করা। এভাবে গুম কমিশন অভিযুক্তদের বিচারের ব্যাপারে কাজ করছে।

সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম, খুলনা জেলা আইন কর্মকর্তা (জিপি) অ্যাডভোকেট ড. মো. জাকির হোসেন, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তৌহিদুর রহমান চৌধূরী তুষার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. নাজমুস সাদাত শুভ।

এর আগে গতকাল শুক্রবার খুলনার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে গুম থেকে ফেরত আসা ব্যক্তি ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের খুলনা বিভাগীয় পরামর্শ সভায় গুম কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের না জানিয়েই আয়না ঘর ও বিভিন্ন বন্দিশালা পরিদর্শন করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে জানিয়ে পরিদর্শনে গেলে সবকিছু গোছানো অবস্থায় পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, কিন্তু না জানিয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে আলামতের মিল পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে একটানা কাজ করে কমিশনের সদস্যরা তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

সেমিনারে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিরা গুম সংক্রান্ত কমিশনের কাছে তাদের দুর্বিষহ নিদারুণ নির্যাতন নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাজধানীর ভাটারায় অপহৃত ফল ব্যবসায়ী উদ্ধার, গ্রেফতার ৫
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় বিমান বাহিনী পরিচালিত কার্যক্রম
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের খোঁজ নিতে বার্ন ইনস্টিটিউটে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা
হত্যা মামলায় আশুলিয়া আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব বেপারী গ্রেফতার
শিক্ষকরাই সমাজ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন : এটিএম আজহারুল ইসলাম
বিএনপি দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ : ড. মঈন খান 
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত গল্প সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে : সংস্কৃতি উপদেষ্টা
মালয়েশিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শহীদ স্মরণ সভায় বক্তারা জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন
বাংলাদেশকে বদলে দিতে হলে আগে রাজনৈতিক সহনশীলতা প্রয়োজন : আমীর খসরু
১০