ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে এবং বিভেদ ও অনৈক্যজনিত ভুল অব্যাহত থাকলে দেশ অনিবার্যভাবে ওয়ান ইলেভেনের দিকে যাবে।
তিনি আজ সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির উদ্যোগে অনুপ্রেরণা, আত্মপর্যালোচনা ও প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারে জুলাই অভ্যুত্থানের ১ম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘পদধ্বনি নয় আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, ২০০৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দেশ যেদিকে হেঁটেছিল এখন আমরা সবাই মিলে সেদিকেই রওয়ানা হয়েছি।’
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য, হয় সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, না হয় গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদার দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচন করা প্রয়োজন।
মঞ্জু বলেন, আজ গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দল হিসেবে এবি পার্টি খুব বড় দল নয়, কিন্তু আমাদের স্পষ্ট মনে আছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ৪ জুলাই দলীয় ব্যানারে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে আমরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছি। বড় দলগুলো এখন নানা বক্তব্য দিচ্ছে, তখন তারা কেউ সরাসরি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন করেনি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনে এবি পার্টি সামনে থেকেও নেতৃত্ব দেয়নি, পেছন থেকেও অনুঘটকের কাজ করেনি। আমরা যা করেছি, আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে এই আন্দোলনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করেছি।
গণ-অভ্যুত্থানে অবদান ও এর অংশীদারিত্ব নিয়ে যে বিতর্ক তা সমাধান না হলে জুলাই আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদি বিভক্তির জন্ম দেবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র যেন আলংকারিক দলিল না হয়, সে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এর প্রতিটি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
তিনি একজন উপদেষ্টার ওয়ান ইলেভেনের পদধ্বনির বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, তিনি তো পদধ্বনি শুনছেন কিন্তু আমরা ওয়ান ইলেভেন চাক্ষুষ দেখছি। যেভাবে রাজনৈতিক বিভেদ বাড়ছে তাতে ওয়ান ইলেভেন সরাসরি দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন,কিন্তু বাস্তবতা হলো হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো পুরো দেশে গেড়ে বসে আছে। আমরা যদি এই রাজনৈতিক বিভেদ দূর করতে না পারি, জনগণের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে না পারি, তবে আজ যারা আন্দোলনের প্রধান শক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন তারা কেউ জনগণের হাত থেকে মুক্তি পাবেন না।
তিনি বলেন, আমরা ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছিলাম-আগামী পাঁচ বছর সব দল মিলে একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ গঠন করতে। সেজন্য পিআরের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাবো, বিভক্তি মূলক বক্তব্য না দিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন।
মজিবুর রহমান মঞ্জু সকল রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিভক্তির মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা যাবেনা। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে রাজনৈতিক বিভেদ দূর করে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠনে আমাদের কাজ করতে হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর এখন আবার আমরা ফ্যাসিবাদের বয়ান, দিল্লির বয়ান শুনতে পাচ্ছি।
রাজনৈতিক বিভক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ পুনর্গঠনে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সকলকে একমত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, আমিনুল ইসলাম, আলতাফ হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, সদস্য সচিব বারকাজ আহমেদ নাসির, মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ কবির, সদস্য সচিব সেলিম খান প্রমুখ।